সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

কেরানীগঞ্জের ৩ খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

আবু জাফর, কেরানীগঞ্জ থেকে:: কেরানীগঞ্জের ৩ টি খাল খনন ও সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলা হলেও প্রান ফেরেনি চুনকুটিয়া, জাজিরা ও শিং খালের। অভিযোগ উঠেছে, খাল ৩ টি যথাযথভাবে খনন না করেই প্রকল্পের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করছেন।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে সরকারি জমি দখলমুক্ত করে সুষ্ঠুভাবে খাল খননের দাবি জানিয়েছেন।

প্রকল্প অনুযায়ী, তিনটি খাল খননে ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় চুনকুটিয়া খালের ৪.২০০ কিলোমিটার, জাজিরা খালের ১.৮৭০ কিলোমিটার ও শিং খালের দৈর্ঘ্য ১৭.৬২ কিলোমিটার খনন ও সংস্কার করার কথা।

২০২৩ সালে দরপত্রের মাধ্যমে চুনকুটিয়া খাল ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও জাজিরা খাল ১ কোটি ২ লাখ টাকায় খননের বরাদ্দ পায় আরসি এন্টারপ্রাইজ। আর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শিং খাল খননের জন্য যৌথভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অসিম সিং, ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ও এমএলটিকেটিএফএমএমএ’ কে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চুনকুটিয়া, জাজিরা ও শিং খাল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে পানিশূন্য হয়ে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল খাল খনন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে বলে দেখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধেরও প্রস্তুতি নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প অনুযায়ী স্থানভেদে ৯ থেকে ১০ ফুট গভীরতায় খননের কথা থাকলেও তার ধারে কাছেও যাননি ঠিকাদাররা। কোথাও এক ফুট আবার কোথাও দুই ফুট, কোথাও বা খনন না করে শুধু ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেই সম্পন্ন করা হয়েছে খননের কাজ।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার দড়িগাঁও অংশে শিং খালটির বেশ কিছু জায়গায় খালের মাটি ও ময়লা-আর্বজনা তুলে পাড়েই স্তূপ করে রাখা হয়। বৃষ্টিতে সেগুলো আবারও খালে গিয়ে পড়ছে। আব্দুল্লাহপুর বাজারের কাছে কোনোরকম আবর্জনা তুলেই খাল খননের কাজ শেষ করা হয়েছে। এভাবে গোটা খালটিতেই খননের নামে যেন তামাশা করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন মোল্লা ও সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিং খাল খননে অনিয়ম করা হয়েছে। কোথাও কোথাও একটুও খনন করা হয়নি। খাল খননের নামে শুধু সরকারি অর্থের অপচয়ই হয়েছে। শিং খাল আগের মতোই মৃতপ্রায়।’

চর কদমপুর গ্রামের আলী ফারুক বলেন, ‘এক সময় এ শিং খাল দিয়ে বড় বড় মালবোঝাই নৌকা যাতায়াত করত। কিন্তু প্রভাবশালীদের দখলের কারণে নদীটি এখন ময়লার ভাগাড়। নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করা হলেও কাজ হয়নি। শিং খাল, চুনকুটিয়া ও জাজিরা খালের মধ্যে বাড়িঘর এবং গরুর খামার রেখে কিছু জায়গায় খালের ঘাস পরিষ্কার করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।’

শুভ্যাঢা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম মোঘল জানান, কাগজে-কলমে চুনকুটিয়া খাল খনন ও বাঁধ সংস্কার হয়েছে। বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। চুনকুটিয়া মসজিদ থেকে কৈর্বতপাড়াসহ বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে মানুষকে। খালেরপাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। বাজারের সব ধরনের ময়লার পলিথিন, পচা কাঁচামালসহ নানান বর্জ্য খালে গিয়ে পড়ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা সবাই মিলে প্রকল্পের টাকা লোপাট করেছে। আগেও ওই খালের জন্য বরাদ্দ এসেছিল। শুধু জঙ্গল পরিষ্কার করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।’ বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় খাল সংস্কারের কোনো কাজই তার চোখে পড়েনি বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়দের মতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাও বলেন, ‘প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে থাকা বাড়িঘর বা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে পারিনি। তাই চুনকুটিয়া ও শিং খালের খনন প্রকল্প ঠিকমতো করতে পারিনি। দরপত্রে চুনকুটিয়া খাল ৪.২০০ কি.মি. খননে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা চুক্তিতে ২.২০০ কি.মি. ৯২ লাখ ৮২ হাজার টাকা, জাজিরা খালের ১.৮৭০ কি.মি. খননে ১ কোটি ২ লাখ টাকার চুক্তি হলেও ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিং খাল খননে ১৭.৬২ কি. মি. ৮ কোটি টাকা চুক্তিতে ১৩ কি. মি. ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা যা সর্বমোট ৫ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকার কাজ আমরা সম্পূর্ন করেছি’।

এ ব্যাপারে চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরসি এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার বিপ্লব জানান, কাজ এপ্রিল মাসে ভালোভাবেই শেষ করা হয়েছে।

অন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে খাল খননে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, ‘আমি বেশিরভাগ এলাকা পরিদর্শন করেছি। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে কোনো কোনো জায়গায় মাটি কাটা যায়নি এটা ঠিক। যে কারণে প্রকল্পের কাঠামো আমরা পরিবর্তন করেছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com