শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:০৬ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় আরও ৫ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১২২

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়া জেলায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৪ নমুনা পরীক্ষা করে ১২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৩ জন এবং মারা গেছেন ১৬২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ১১৬ জন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) রাতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। আরও জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১২২ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৬৭ জন, দৌলতপুরের ১১ জন, কুমারখালীর ৯ জন, ভেড়ামারার ৯ জন, মিরপুরের ১৫ জন ও খোকসার ১০ জন রয়েছেন। মৃত ৫ জনের মধ্যে দুজন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার। একজন করে দৌলতপুর, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার বাসিন্দা।

এ পর্যন্ত জেলায় ৫৭ হাজার ৭৯২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার ৭৮৭ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৩৮৫ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৩৫ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ২৫০ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে কুষ্টিয়া জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। রোববার (২০ জুন) রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন আগামী ২৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কুষ্টিয়া জেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। শুধু ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া সবপ্রকার দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এখানে কঠোর লকডাউন চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনার শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের হার কখনও ২০ শতাংশের ওপরে যায়নি। কিন্তু এখন শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভিড় লেগেই আছে। বেডের তুলনায় সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা, স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার জায়গাটুকুও রোগীর শয্যায় পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালের ১০নং সার্জিক্যাল ওয়ার্ড ও মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের একটি অংশকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীদের চাপ সামাল দিতে যেকোনো দিন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ১০০ শয্যার বিপরীতে এখন রোগীর সংখ্যা ১২০ জন। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ৩০ জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। রোগী বাড়ছে। পরিস্থিতি ভালো না। উপজেলা পর্যায় এবং গ্রাম থেকে রোগী বেশি আসছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com