রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

কালিয়াকৈরে নিরীহ পরিবারকে বাড়িতে ও থানার ভিতরেও নির্যাতনের অভিযোগ

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি::

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক নিরিহ পরিবারের সদস্যদের তাদের বাড়ির ভিতরে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। থানার ভিতরে নিয়েও তাদের আবার নির্যাতন চালিয়েছে বলে ওই পরিবারের অভিযোগ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মা, ছেলে ও দুই মেয়ের নামেই পৃথক মামলা দিয়ে গাজীপুর কোর্ট হাজতে পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে একজন এইচএসসি পরিক্ষার্থী রয়েছে।

নির্যাতিত পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জাফর আলী ও এসআই কামাল হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সিভিল পোষাকে কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের জালশুকা এলাকায় মৃত হাসান আলীর বাড়িতে যান। কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরওয়ানা না থাকলেও মৃত হাসান আলীর ছেলে শাহীন আলমকে আটক করে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় আলমের মা সুফিয়া আক্তার ছবি, আলমের দুই বোন হাসিনা আক্তার ও বকুল আক্তার জানতে চান, আপনারা কারা? কেন আলমকে মারধর করছেন? কিন্তু পুলিশ তাদের পরিচয় না দিয়ে নিজের বাড়িতেই অমানবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। এসময় ওই পুলিশ কর্মকর্তারা অশ্লীল ভাষায় পুলিশ তাদের গালিগালাজ করে। এক পর্যায় আলমের মা ও বোনেরা বাধা দিলে তাদের ও পুলিশের সঙ্গে দস্তাদস্তি হয়। পরে ওই সেকেন্ড অফিসার জাফর থানায় জানালে দুই গাড়ি পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। এসময় পাঁচ বছরের শিশু ছেলে হাসিবুল হাসানের সামনেই পুলিশ তার নানি ছবি, মা হাসিনা, খালা বকুল ও মামা আলমকে বেধরক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় পুরুষ পুলিশরাই ওই নারীদের কাপড় টানা-হেচড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিশুর আর্তনাদেও পুলিশ তাদের রেহায় দেয়নি। পরে পুলিশ ওই শিশু ও তাদের পরিবারের সবাইকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতে ওই শিশুকে পাশের কক্ষে রেখে তার নানি ছবি, মা হাসিনা, খালা বকুল ও মামা আলমকে থানার ভিতরে পাষবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। নিজের বাড়িতে প্রকাশ্যে ও পরে রাতে থানার ভিতরে ওই তিন নারীকে পুরুষ পুলিশই অমানবিক নির্যাতন চালায়।

এঘটনার পর বুধবার বিকেল ৪টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ বছরের শিশু হাসিবুল কালিয়াকৈর থানার ভিতরে তার মায়ের সঙ্গে থাকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহীন আলমকে পুরোনো গরু চুরি মামলা ও আলমের মা সুফিয়া আক্তার ছবি, আলমের দুই বোন হাসিনা আক্তার ও বকুল আক্তার নামে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে গাজীপুর কোর্ট হাজতে পাঠিয়েছে। ওই পুলিশের গাড়িতে শিশু হাসিবুলও ছিলেন। আসামীদের মধ্যে বকুল আক্তার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রী। এবছর এইচএসসি পরিক্ষার্থীও। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও থমথম বিরাজ করছে। তবে ওই সেকেন্ড অফিসার এসআই জাফুর আলী ও এসআই কামাল হোসেনের দাবি, ওই পরিবারটি খারাপ প্রকৃতির। আলম মাদক ব্যবসা, গরু চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) জাফর আলী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে এ বিষয়ে ওই অভিযুক্ত জাফর আলী কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন।

আলমের মা সুফিয়া আক্তার ছবি, আলমের দুই বোন হাসিনা আক্তার ও বকুল আক্তার বলেন, পুলিশ পোষাক পড়া ছিল না, তাই ওনাদের চিনতে পারিনি। তাই বলে নিজের বাড়িতে আমাদের সবাইকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও এলোপাথারি মারধর করেছে। থানার ভিতরেও পাষবিক নির্যাতন চালায়। আমরা নারী হওয়া সত্তে¡ও পুরুষ পুলিশরা কাপড় টানা-হেচড়াসহ কিভাবে মারধর করলো? তা বুঝাতে পারব না। পুলিশের গাড়িতে উঠার সময় বকুল আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, আমি এইচএসসি পরিক্ষার্থী। আমাকে ছেড়ে দিন, আমাকে ছেড়ে দিন।

কালিয়াকৈার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, এ ঘটনায় ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে আসামীদের কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com