বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
মজিবুর রহমান (ফরিদপুর)সালথা প্রতিনিধি,ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম॥ ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে এইদেশ । বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন নবযৌবন ফিরে পায়।সবুজ পাতায় ছেয়ে যায় বৃক্ষরাজি, বিশেষ করে বর্ষাকালে জলজ উদ্ভিদ প্রাণ ফিরে পায়। শাপলা, শালুক, কচুরিপানা আর পদ্মফুলে সজ্জিত হয় খাল-নদী আর বিল। ফরিদপুর সদরে অবস্থিত চাপাই বিলটি এমনই পদ্মফুলে সজ্জিত হয়ে নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে।
শুক্রবার (১২ আগষ্ট) বিলটি ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার ৯নং কানাইপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীতে বিস্তৃর্ণ বিলজুড়ে সাদা ও গোলাপী রঙের পদ্মফুল ফুটে আছে।চাপাইবিল নামে পরিচিত এ বিলের পশ্চিমে রনকাইল গ্রাম। এ বিলের আবদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। এখানে দৈনন্দিন জেলা, উপজেলা, উইনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী পেশার লোকজন ভীর জমাচ্ছে।শাপলা ফুল না ফুটলেও হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটেছে বিলটিতে। সারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। তবে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেই।
রনকাইলের পাশেই সাইবারিয়া গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী সাবেক ইউপি মেম্বর প্রার্থী মো: সোবহান শেখ বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই দেখি, এ বিলে বর্ষাকালে পদ্মফুল ফোটে। আমরা পদ্মফুলের পাতা কুড়িয়ে হাটে বিক্রি করেছি। সেই টাকা দিয়ে আমাদের সংসারও চালিয়েছি। তখন অনেক অভাব ছিল। ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ফকির মো: লুৎফর রহমান বলেন, বর্ষা এলেই পদ্মফুল ফোটে। আমরা ছোটবেলায় শুকনো মৌসুমে অনেক পদ্মগাছের বীজ কুড়িয়ে খেয়েছি। এখন আর বীজ দেখা যায় না, তবুও বর্ষায় পদ্মফুলের গাছ জন্মে।
স্থানীয় মাঝি সহ অনেকেই বলেন, এক সময় হাটে এ বিলের পদ্মপাতায় লবণ, মাছ, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হতো। পদ্মপাতায় মেজবানিও খাওয়ানো হতো। এছাড়া ইরি মৌসুমে এখানে ধানের আবাদ হয়। শীত মৌসুমে কলাই, শাক, সবজিরও আবাদ হয়। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে বিলটি। তখনই দেখা যায়, হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটে আছে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এ পদ্মফুল ফুটে থাকে।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মো: ইব্রাহিম মোল্লা চাপাই বিলটি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, বছরের অন্তত চার মাস বিলটিতে পদ্মফুল ফুটে থাকে এবং সৌন্দর্য ছড়ায়। এসময়টায় পদ্মফুল যেন কেউ না তোলে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি প্রয়োজন।
“ঘুড়ি-ফিরি ফরিদপুর” নামক একটি সামাজিক সংগঠনের মোডারেটর মো: ইকবাল মাহমুদ ইমন জানান, জলজ উদ্ভিদ পদ্ম বহু বর্ষজীবী। স্কন্দের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গাছটিও বাড়তে থাকে। একটি গাছে একটি ফুল ফোটে। এটি সাদা, লাল ও নীল রঙের হয়। ফুটন্ত ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়ানীর পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মো: ইনামুল হাসান মাসুম জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল চাপাইবিলে পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে আসছেন।আমার বন্ধুদের নিয়ে আজকেও চাপাইবিলে ঘুরতে এসেছিলাম। নৌকায় করে পুরো বিলটা ঘুরলাম। রাশি রাশি পদ্মফুল বিলটাকে পুরো ছেয়ে ফেলেছে। এমন সৌন্দর্য্য দেখার জন্য সবাইকে অন্তত একবার হলেও এ বিলে আসা উচিত। তিনি আরো বলেন, এখানে থাকার বা বসার কোন ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে এখানে একটা মৌসুমী মিনি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানাচ্ছি। এতে একদিকে যেমন পর্যটকদের সুবিধা হবে অন্য দিকে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।
এ ব্যাপারে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, এই রনকাইল চাপাই বিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই আমার বিশ্বাস যে একবার ঘুরতে আসবে তিনি বারবার আসতে চাইবেন। কারন আমি এখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাস্তা করে দিয়েছি, সেই রাস্তা ত্রানমন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে পাকারাস্তা করন এবং পথচারীদের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, মানুষের বসার সু-ব্যবস্থা সহ অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি এবং আগামীতে পর্যটকদের জন্য আরো উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করবো, ইনশাল্লাহ্।