বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন

কাঁঠাল থেকে চিপসসহ ১০টি পণ্য তৈরি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠালকে শুধু পাকা ফল হিসেবে খাওয়ার কারণে এটি যখন পাকতে শুরু করে তখন একসঙ্গে বেশির ভাগ কাঁঠালই পেকে যায়। ফলে সেই সময় গাছ থেকে ৩০-৪০ ভাগ কাঁঠাল প্রাকৃতিকভাবে পড়ে যায়, যা খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এসময় নষ্ট হয়ে যায় অনেক কাঁঠাল। কিন্তু কাঁঠালকে বাণিজ্যিকীকরণের যথাযথ উদ্যোগ নিলে এবং এ ফল দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যসামগ্রী তৈরি করলে সারাবছর খাওয়া যাবে।

এজন্য কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপচয় রোধ করতে গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষাণা ইনস্টিটিউটের পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি শাখায় গত ২৬ জুন ‘কাঁঠাল সংগ্রহোত্তর পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ’ শীর্ষক স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার ২৯ জন বাসিন্দা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় জানানো হয়, কাঁঠালের চিপস্, ভেজিটেবল মিট, ফ্রেশ-কাট, ফ্রোজেন, অসমোটিক ডিহাইড্রেটেড প্রোডাক্ট, রেডি-টু-কুক, ভিনেগার, কাঁঠালসত্ত্ব, জ্যাম, আচারসহ বহুবিধ উৎকৃষ্টমানের ও মুখরোচক খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা এর মধ্যে শুরু হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, অনেক দেশেই গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান বছরব্যাপী কাঁঠালের তৈরি খাদ্যসামগ্রীকে জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য করেছে। এতে কৃষক, উদ্যোক্তা ও ভোক্তা সবাই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কাঠাঁলের অপচয় হয়ে থাকে। কৃষক তার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কাঁঠালকে সঠিকভাবে কাঁচা থেকে ব্যবহার করা গেলে বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে বহুলাংশে অপচয় কমে আসবে এবং আমাদের দেশেই থাইল্যান্ডের বা ভিয়েতনামের মতো কাঁঠালের চিপস্, ভেজিটেবল মিট, ফ্রেশ-কাট, ফ্রোজেন, অসমোটিক ডিহাইড্রেটেড প্রোডাক্ট, রেডি-টু-কুক, ভিনেগার, কাঁঠালসত্ত্ব, জ্যাম, আচারসহ বহুবিধ উৎকৃষ্টমানের ও মুখরোচক খাদ্যদ্রব্য অনায়াসে তৈরি করা সম্ভব।

কৃষি গবেষাণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুল হক খান বলেন, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে ১ দশমিক ৮ গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম ও কাঁঠালের বীজে ৬ দশমিক ৬ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল রোগ-ব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। এটি ক্যান্সারের মোকাবিলায়ও সাহায্য করে। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।

দেশের প্রায় সব এলাকায় কম-বেশি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়ে থাকে। অঞ্চলগুলোর মধ্যে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, সুনামগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ও উৎকৃষ্টমানের কাঁঠাল উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই সব অঞ্চলের কাঠাঁল ভরা মৌসুমে দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই রাস্তাঘাটে, ভ্যানে-রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পু, ট্রাক ও রাস্তার মোড়ে ও বাজারে ক্ষুদ্র চাষি, ব্যবসায়ী, আড়তদার, বেপারী ও পাইকারি বিক্রেতাদের স্তুপ করে বিক্রয় করতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কাঁঠালের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com