বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

কলাপাড়া পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হয়রানি ও দাবী আদায়ে মানববন্ধন

কলাপাড়া প্রতিনিধি:: পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ টাকা উত্তোলনে হয়রানি বন্ধ, বিকল্প কর্মসংস্থান এবং নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং স্থানীয় গ্রামবাসী।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের মুজিব কিল্লা সংলগ্ন বাজারে দাবী আদায়ের কর্মসূচিতে পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থ মোঃ কবির তালুকদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এ্যাড. মামুন হাওলাদার, ইউপি সদস্য সালমা বেগম, আলহাজ্ব কেরামত হাওলাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম মোল্লা, নজরুল ইসলাম, সোহাগ তালুকদার, ব্যবসায়ী বশির হাওলাদার, হাসান হাওলাদার, নাসির মুন্সি অটো ড্রাইভার আবুল হাসান মোল্লা, মাহমুদা বাবলী, তাজনাহার বেগম,ঢালী কামরুল ইসলাম, চানমিয়া হাং সহ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় সরকার বাস্তবায়ন করছে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং হাজার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি। বিগত দশ বছরে চলমান এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য এবং ক্ষতিপূরণ অনিশ্চয়তা ছাড়াও আছে দালাল ও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার উৎপাত। দালালের সহায়তায় প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। অনেক জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে গেছে এমন ভুয়া মামলায়। এতে মিলছে না ক্ষতিপূরণ, বরাদ্ধ পাচ্ছে না পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু পরিবারকে। আবার অনেককে পুনর্বাসন করা হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কৃষক ও জেলে পরিবার হঠাৎ হারিয়েছে মাছ ধরার জলাশয় এবং কৃষিজমি। তাঁরা এখন বেকার। কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পের কারণে ইলিশ প্রজননসহ প্রাণ-প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইনদের ২৩৯ বছরের পুরোনো ছয়ানীপাড়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। একইসাথে পায়রা বন্দরের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ভারী ট্রাক ভেকু ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ফলে শেখ হাসিনা সড়ক থেকে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে চলাচলের স্থানীয় সড়কের গাজীর বাড়ি থেকে টিলার বাজার অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দরা চলাচল করতে পারছে না। অসুস্থ রুগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আলহাজ্ব কেরামত হাওলাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না। স্কুল কমিটি এবং শিক্ষকরা বলেছেন বর্ষাকালে রাস্তায় চলাচল না করতে পারার কারণে স্কুলের উপস্থিতি কমে গেছে।

দালাল চক্র এবং মামলার হয়রানি: ভূমি অধিগ্রহণ ঘিরে কলাপাড়ায় সক্রিয় এক শ্রেণির দালাল চক্র। তাঁরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে হাত করে অসাধু কর্মকা- চালাচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগ ও কাল্পনিক মামলার কারণে অধিগ্রহণ করা জমি মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সময়মতো তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। এসব গ্রামে শত শত দালাল কাজ করছে। তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সঙ্গে সংযোগ রেখে নানা তথ্য সংগ্রহ করে। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ওয়ারিশ দাবি করে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন দালালরা। একই জমির একাধিক ব্যক্তিমালিকানা দাবি করে অধিগ্রহণ শাখায় অনাপত্তি কিংবা আদালতে মামলা করার পর পুরো কার্যক্রমটি স্থবির হয়ে যায়। মামলার কারণে সঠিক মালিকানা চিহ্নিত হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় টাকা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। দালালদের তৎপরতা ও মামলার কারণে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা যেমন পাচ্ছেন না, তেমনি তাঁদের মিলছেনা আবাসনও।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ এবং পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে হয়রানী বন্ধ করতে ও বিকল্প কর্মসংস্থানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সেই সাথে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ক্ষতিগ্রস্ত সকল সড়ক দ্রুত মেরামত করা হোক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com