সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৫ অপরাহ্ন
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরে কতিপয় সন্ত্রাসীরা কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এস এম মনিরুল ইসলাম (৫০) এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অসীম তালুকদারকে (৫২) কুপিয়ে জখম করেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কলাপাড়া পৌর শহরের গোডাউন ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আহত এ দুই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানের সমর্থক বলে জানা গেছে। মাহবুবুর রহমানের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) সংসদীয় আসনে আজ মনোনয়ন পত্র দাখিল করার কথা রয়েছে। হঠাৎ করে কলাপাড়ার রাজনীতিতে সহিংস এ ঘটনার জন্য মাহবুবুর রহমান বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমানকে দায়ী করেছেন। মাহবুবুর রহমান আরও অভিযোগ করেছেন, তাঁর মনোনয়ন পত্র দাখিল উপলক্ষে পূর্ব নির্ধারিত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে আসার পথে বিভিন্ন স্থানে এমপি মহিববুর রহমানের সন্ত্রাসী কর্মীরা বাঁধা দিয়েছে। তা ছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় তাঁর আরও ১৫ জন নেতা-কর্মী বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে।
আহত অসীম তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, আমি ও সহকর্মী মনিরুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহাবুবুর রহমানের মনোনয়ন পত্র দাখিল উপলক্ষে পূর্ব নির্ধারিত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। বালিয়াতলী স্টেশন থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে শহরের গোডাউন ঘাট এলাকায় নামলে বর্তমান এমপি ও নৌকার মনোনয়ন পাওয়া মোঃ মহিববুর রহমান এর লালিত মোঃ আশিক তালুকদারের নেতৃতে সাবেক ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা দৌড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পড়ে যাই। এ সময় সন্ত্রাসীরা হাতে থাকা রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। সন্ত্রাসী হামলায় আমরা দুজনই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, অসীম তালুকদারের ডান ও বাম দুপায়ে ও পিঠে একাধিক কোপে জখম হয়েছে। এছাড়া বেধড়ক মারধরে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। অপর দিকে এস এম মনিরুল ইসলামের পিঠ, দুই হাত ও পায়ে, পিঠে রামদার কোপ লেগেছে। তাঁর শরীরেও বেধড়ক পিটুনিতে জখম হয়েছে। আহত এ দুইজনকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিগত পাঁচটি বছর এমপি মহিববুর রহমান শান্তিপূর্ণ কলাপাড়াকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও সহিংস জনপদে পরিনত করেছেন। নির্বাচনের মুহুর্তে এ ঘটনা তারই প্রতিফলন। এ ঘটনার জন্য এমপি মহিববুর রহমানের সন্ত্রাসী কর্মীরাই দায়ী। তিনি আরও বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করবো এমন ঘোষণা দেয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান ও তাঁর কর্মীরা মেনে নিতে পারছেনা। যে কারণে নির্বাচনের শুরুতেই তাঁরা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। আমি এ ঘটনার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, আওয়ামীলীগ আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি আওয়ামীলীগের কাজ করি। আর কেউ কী দাঁড়াইলো, না দাঁড়াইলো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। এ নিয়ে আমার কোনো বিরোধিতাও নাই। আমার সমস্ত কর্মীদেরকেও নির্দেশ দেয়া আছে, কেউ কারো কোথাও বাঁধা সৃষ্টি করবেনা। এ নিয়ে আমরা কোনো দায়-দায়িত্বও নিবোনা। এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। এ ঘটনা মাহবুবুর রহমানের অভ্যন্তরীণ ঘটনারই অংশ, যা আমাদের ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ একুশের কণ্ঠকে বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আহতদেরকেও দেখে এসেছি। তবে এতটুকু বলতে পারি, যাঁরাই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক না কেন অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।