সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

করোনায় “বৈশাখী মেলা হচ্ছে না” হামরা এ্যালা কি করি খাই

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাটে বৈশাখী মেলা নাই। করোনায় বসি বসি চলছে হামার দিন। হামরা এ্যালা (এখন) কি করি খাই! সংসার চলার মত কোন পথও নাই। সরকার থেকি (থেকে) কোন সহযোগীতাও পাই না হামরা। এমন করি বসি থাকলে আয়-রোজগার না হইলে, কেমন করি (কিভাবে) পরিবার নিয়া বাঁচমো হামরা। হামরা খুব কষ্টে আছি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কাকিনার মৃৎশিল্পী ফনিমল পাঁল।

এভাবেই কাকিনার ৫০টি মৃৎশিল্পী পাল পরিবার করোনার প্রভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছ। একই চিত্র পুরো জেলার মৃৎশিল্পীদের মাঝে বিরাজ করছে। মৃৎশিল্পী সম্প্রদায়ের লোকজন বেঁচে থাকেন বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। পয়লা বৈশাখের দিন থেকে পুরো বৈশাখজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো লালমনিরহাট জেলার কিছু স্থানে বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে।

কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি তাঁদের জন্য বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। করোনার গত বছরের মত এবারেও বন্ধ রয়েছে বৈশাখী উৎসব। আগে থেকে বায়না করে রাখা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শেষ মুহূর্তে ফরমাশ বাতিল করেছেন। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে দেশের মানুষের যখন জীবনযাত্রা থমকে গেছে, কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ, তখন নান্দনিক মৃৎশিল্পীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

সরেজমিনে কুমার পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাটির তৈরি সামগ্রী পোড়ানোর চুলা বন্ধ। মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল বিক্রি করে দিনে কয়েকশত টাকা রোজগার করে যারা সংসারের চালাতো, তারা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির আগেও যারা সামান্য রোজগার করে সংসার চালাতো আজ তাও বন্ধ। রোজগারের অন্য কোনো উপায় না থাকায় বাড়িতে বসে কিছু কিছু পণ্য তৈরি করে বিক্রি করলেও তা সংসারের খরচ চালানোর কষ্ট সাধ্য। এছাড়া হাট বাজারে লোক সমাগম না থাকায় বাজারেও নেয়া যাচ্ছে না তৈরিকৃত মাটির পণ্যগুলো। তাই করোনায় এমন কঠিন সময়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন কাকিনার মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পী কোনা পাল বলেন, একদিকে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে আমাদের তৈরি পণ্য গুলো চলে না। এখন আবার করোনার কারণে একেবারেই আমাদের কাম কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জিনিসপত্র বাড়িতে তৈরি করে রাখা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না বা কোথাও নিয়ে যেতে পারছি না। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই সরকার যেন আমাদের সহযোগিতা করে।

মিনতি রানী পাল বলেন, আমরা নিজেরাই কি খাব আর ছেলে মেয়েদের কি খাওয়াব তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। এমনভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আমরা সামান্য রোজগার দিয়ে জীবন চালাই, এখন তাও বন্ধ।

বুদারু পাল জানায়, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহারযোগ্য করে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। আমরা সরকারের কাছে থেকে স্বল্পশর্তে ঋন সহায়তা পেলে হয়ত এ পেশা চালিয়ে যেতে পারবো।

সন্তোস পাঁল নামে এক কুমার জানান, আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এই মৃৎ শিল্পকে ধরে রাখতে পারবো এবং ট্রেনিংয়ের ব্যাবস্থা হলে আমাদের এই পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে মৃৎ শিল্পের সাথে জরিত পরিবারগুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইনের পন্যসামগ্রী উৎপাদন করতে পারবে বলে জানান তিনি। ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কুমাড়রা। করোনা পরিস্থিতিতে হাট-বাজারসহ সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন চলছে তাদের। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত মৃৎশিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর বলেন, করোনা ভাইরাসেই সব উলট পালট করে দিয়েছে। বৈশাখ আসলেই জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা হয় আর সেই মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরী জিনিসপত্র বিক্রি করে ভাল একটা উপার্জন করে। কিন্তু এবার সব কিছু থেকে বঞ্চিত তারা। তবে সরকারী বরাদ্দের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com