সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ ইসলাম হোসেন, জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ::
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারেও মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজগঞ্জের নেতারা। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারই মন্ত্রী নেই এ জেলায়। ফলে মন্ত্রী শূন্য হয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জবাসী।
গত রোববার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে নাম ঘোষণার সময় আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল সিরাজগঞ্জের নেতারা। তবে মন্ত্রীর তালিকায় সিরাজগঞ্জের কোনো নেতার নাম না থাকায় হতাশ এখানকার আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থকরা। দিনভর পুরো সিরাজগঞ্জ জুড়ে এটাই ছিল আলোচিত বিষয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতাশা প্রকাশ করেন অনেকেই।
জেলার রাজনৈতিক সচেতনরা বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম সিরাজগঞ্জের সন্তান শহীদ এম মনসুর আলী। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি। ওই সময় বেলকুচি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন তালুকদারও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলেও মন্ত্রীত্ব পান ডা. এম এ মতিন। পরবর্তীতে এরশাদের আমলে মন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন থেকে নির্বাচিত আনছার আলী সিদ্দিকী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পরে স্বরাষ্ট্র এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। একই সরকারে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হাসিবুর রহমান স্বপন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এছাড়া ২০০৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নিযুক্ত হন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ওই সরকারে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এইচ টি ইমাম। ২০১৪ সালে মহাজোট সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বিপুল বিজয়ের পুরস্কার হিসেবে দু জন মন্ত্রী পাবেন এমনটাই আশা ছিল সিরাজগঞ্জ বাসীর। কিন্তুু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে টেলিভিশনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নামের তালিকা দেখে। উৎসুক জনতা দিনভর টিভির সামনে এবং মোবাইলে অনলাইন নিউজ দেখতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে সিরাজগঞ্জের কারও নাম না থাকায় হতাশ হন দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
হাটিকুৃরুল হাইওয়ে প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সলঙ্গা থানা জাতীয় শ্রমীকলীগের সভাপতি মাসুদ রানা শান্ত, হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম রেজা,হাটিকুমরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন,সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীরা সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক, এমদাদুল হক এমদাদ,সিরাজগঞ্জ জেলা সেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি, নুরুল ইসলাম স্বজল, সিরাজগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের চাঁন, সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম বলেন-ধারণা ছিল জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম ও ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না মন্ত্রীত্ব পাবেন। পাশাপাশি জেলার বাকি পাঁচটি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও একজনকে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যাবে এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু ঘোষিত মন্ত্রিপরিষদে সিরাজগঞ্জের কারও নাম না থাকায় আমরা অত্যান্ত আশাহত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি এ জেলায় অন্তত একজনকে হলেও মন্ত্রীত্ব দেওয়া হোক।
সিরাজগঞ্জে মন্ত্রীত্ব শূন্য ব্যাপারে হাটিকুৃরুল হাইওয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি, সলঙ্গা থানা জাতীয় শ্রমীকলীগের সভাপতি মাসুদ রানা শান্ত আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিন মন্ত্রী পরিষদে রদ বদল হলে অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আশা করি সিরাজগঞ্জ বাসীর মন্ত্রী শূন্যেতার বিষয়টি দেখবেন। সেই সাথে বর্তমান সরকারের সার্বিক সফলতা কামনা করেন।
৯নং হাটিকুমরুল ইউপি চেয়ারম্যান আলম রেজা বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে প্রতিটি সরকারের আমলে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এ জেলা থেকে প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীও দেওয়া হয়েছিল। এবার মন্ত্রিত্ব না থাকায় জেলাবাসী হতাশ। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিছুটা হলেও ধীরগতি হবে।হাটিকুমরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রি সভায় সিরাজগঞ্জের কোনো মন্ত্রী না থাকায় আমরা অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত।
তিনি আরও বলেন, নেত্রী যাকে ভাল মনে করেন তাকেই মন্ত্রীত্ব দেবেন। মন্ত্রী বিহীন সিরাজগঞ্জে উন্নতির কোনো বিঘ্নিত হবে কি না জানতে চাইলে। নাসির উদ্দিন বলে, মন্ত্রী না থাকলেও সিরাজগঞ্জে উন্নতি পূর্বের মতোই চলতে থাকবে। কারণ আমাদের নেত্রী সমমনা। তবুও আমাদের দাবি সিরাজগঞ্জে মন্ত্রী দেয়া হোক।