শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
জাহিদ হাসান, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের উলিপুরে চরাঞ্চলের ৩৬টি বিদ্যালয়সহ ১১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক ও ১২৭ জন সহকারী শিক্ষকসহ ৬ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শুন্য। চরের বিদ্যালয়গুলোতে একজন অথবা ২জন শিক্ষক দিয়েই চলে বছরের পর বছর পাঠদান।
জানা গেছে, উপজেলার নদীবেষ্ঠিত বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, বজরা, গুনাইগাছ ও থেতরাই ইউনিয়নের ৪০টি চরে অবস্থিত ৩৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক ও অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রমে অচল অবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে বর্ষাকালসহ বছরের অধিকাংশ সময় চরের বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস হয় না। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি শিক্ষকের অভাবে ক্লাস না হলেও পরীক্ষায় তাদের পাশ করাতে হচ্ছে। ফলে চরের শিক্ষার্থীরা প্রাইমারী পাশ করলেও মাধ্যমিকে ভর্তি হতে না পেরে ঝড়ে পড়ছে। ইতিপূর্বে কয়েক দফা নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেও এসব চরের স্কুলে কাউকে দেওয়া হয়নি বরং চরের বেশ কিছু শিক্ষককে ডেপুটেশনে অন্যত্র পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, ২৬৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ২৬৭, কর্মরত আছেন ১৫৫ জন, শুন্য পদ ১১২। সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৪৫৭টি কর্মরত আছেন ১৩৩০ জন, শুন্য পদ ১২৭। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদ রয়েছে ৯টি, কর্মরত আছেন ৩ জন, ৬টি পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুন্য।
সীমান্তের ইউনিয়ন সাহেবের আলগার মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক শুন্য থাকা যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে একজন শিক্ষক আছেন, সম্প্রতি তার বিসিএস ক্যাডারে প্রানী সম্পদ বিভাগে চাকুরী হওয়ায় আবারও স্কুলটি শিক্ষক শুন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক ছাড়াই, একজন অথবা দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে, দই খাওয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন হাজারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বাঘুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম নুরনাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গুজিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেকুরের আলগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছ গ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেবের আলগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাডোবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুখের বাতীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুদির কুঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩৬ টি বিদ্যালয়।
অবিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, চরের স্কুলগুলো একজন, সর্বচ্চো দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলে। তারাও প্রায় আসেন না, ফলে বন্ধ থাকে স্কুল। চরের স্কুলগুলো চলছে কিনা তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন মাথা ব্যথা বা উদ্যোগ নেই বললেই চলে। চরের স্কুলগুলোতে কেউ যেতে চায় না, তাই এ অবস্থা বলে জানায় তারা।
সুখের বাতীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক ও (ভারঃ) প্রধান শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, তার স্কুল ভবন দুই বছর আগে নদীতে ভেঙ্গে গেছে, পাশের এক ব্যক্তির বাড়ীতে ভাড়া দিয়ে কোন রকমে স্কুল চালাচ্ছি। তিনি কুড়িগ্রামে থাকেন, প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে সপ্তাহে দুই দিন যান। বাকী দিন তার নিজস্ব প্যারা শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালু রেখেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন এ ভাবে শিক্ষদান করা সম্ভব নয়।
মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি শিক্ষক শুন্য স্কুলটিতে বিগত ২০২৪ সালে যোগদান করেন। তার পর থেকে তিনি একাই স্কুল চালাচ্ছেন। ৬ পদের স্কুলটিতে ১১৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৪৪তম বিসিএসএ তার চাকুরী হওয়ায় তিনি ইস্তোফা দিয়েছেন।
সুখের বাতীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুস ছবুর বলেন, শিক্ষক সংকটের কারনে চরে স্কুলগুলো প্রায় বন্ধ থাকে, মাঝে মধ্যে খোলে কিন্তু ক্লাস হয় না। তার উপর নজরদারী না থাকায় চরের পাঠদান কার্যক্রম একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ নার্গিস ফাতিমা তোকদার বলেন, শিক্ষক সংকট, সঠিক সময় শিক্ষক উপস্থিতি ও কারিকুলাম মোতাবেক পাঠদান না করায়, পাঠদান কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে। তিনি যোগদানের পর থেকে শিক্ষক উপস্থিতি ও শিক্ষার্থী উপস্থিতির উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।