বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

উলিপুরে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভেবিলীন, আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ

মো: জাহিদ, ‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে শতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভেবিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটে হারিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যায় রুপ নিয়েছিলো। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকায় ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনে নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন এসব এলাকার মানুষ। অসময়ে তিস্তার চরে এত তীব্র ভাঙ্গন জীবনেও কখনো দেখেনি তিস্তা পাড়ের মানুষ।

‎সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে চর গোড়াইপিয়ারে তিস্তার ভাঙ্গনে শতাধিক বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদী গর্ভেবিলীন হয়ে গেছে। বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষের নতুন দুর্ভোগের স্বীকার নদী ভাঙ্গন। নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসতভিটে ঘর বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ভাঙন কবলিত মানুষজন। হুমকির মুখে চর গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাম নিয়াসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়ান সতরা চর গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মসজিদ, ৪টি নূরানী মাদ্রাসা। এরমধ্যে চর গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদ দু’এক দিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে। ওই এলাকার তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষেরা বলছেন, যেভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তারাতারি ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে চরাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার পরিবারের ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

‎এছাড়াও উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের তিস্তা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোর মধ্যে পশ্চিম বজরা, বাঁধের মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়, সাতালস্কর, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকা ভাঙ্গন কবলিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।


‎এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী খননের কাজ না হওয়ায় প্রতি বছর এসব এলাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক বসতভিটা বাড়িঘর নদী গর্ভেবিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। তারা আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর এরকম দুঃখ দূর্দশায় পড়তে হবেনা চরাঞ্চলসহ তিস্তা পাড়ের মানুষের। আমরা ত্রাণ চাইনা, আমরা চাই নদী সংস্কার। প্রতিদিনে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তাদের দুঃখ দূর্দশা দেখার যেন কেউ নেই।

‎উপজেলার থেতরাই চর গোড়াইপিয়ার এলাকার দবির উদ্দিন (৬৭) বলেন, আমি চর গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদের মোয়াজ্জিনি সহ কৃষি কাজ করে জীবন যাপন করি। অনেক বছর আগে আমার বাড়ি ১৫ বার তিস্তা নদী গর্ভেবিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এ চরে অবস্থান নেই। অনেক বছর হলো ভালোভাবেই বসবাস করে আসছি। হঠাৎ তিস্তার ভাঙ্গনে মসজিদ সহ আমার বাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। এখন আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। এখন আমি অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। কয়েকদিন হয়ে গেলো ঠিকভাবে পেটভরে খেতে পারছিনা।

‎ভিটেমাটি নদী গর্ভেবিলীন হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা মজিবর রহমান (৫০), আইয়ুব আলী (৬৫), তৈয়ব আলী (৫২), মর্জিনা বেগম (৩২) ও সাজিনা বেগম (৪৬) সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তা নদীতে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। শত শত একর জমি বাড়িভিটে সব নদীতে চলে গেছে। তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মত কিছুই থাকলো না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। নদী ভাঙ্গন রোধে জোর দাবী জানান।


‎ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আশা মনি (৬ষ্ঠ শ্রেণি), নাছরিন আক্তার (৩য় শ্রেণি) ও রবিউল ইসলাম (১ম শ্রেণি) সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে আমাদের পড়ালেখায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা স্কুলে যেতে পারছিনা। রাত্রে ঘুমাতে পারিনা। বাসায় পড়াশোনা করেতে পারিনা। তিস্তা নদী আমাদের স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে।

‎থেতরাই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আজিজার রহমান বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে ভাঙ্গনে শত শত একর আবাদি জমি ও বাড়িভিটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এপর্যন্ত চর গোড়াইপিয়ার এলাকায় শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নূরানী মাদ্রাসা ও মসজিদ হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধের জোর দাবী জানান তিনি।

‎এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, চরাঞ্চলে যেসকল পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এসব পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com