বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ১০:১৮ অপরাহ্ন
মাদারীপুর প্রতিনিধি:: এর আগেও তিনবার মেম্বার ছিলাম। তখন মানুষ আমাকে ‘গরীবের বন্ধু’ বলে ডাকতো। আবারও গরীবের বন্ধু হবো। সামনের নির্বাচন নাও পাইতে পারি। তাই নিজেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। জনগণ ভোট দিলে কাজ করে দেখাইয়া যাইতে পারবো ’তাই আবার মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য এবারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি এমনটি জানালেন, ৮১ বছর বয়সি লাল মোহাম্মদ বেপারীর।
তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাসের কাছে তার মনোনয়নপত্র দালিখ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই সমাজ-সেবক বৃদ্ধা লাল মোহাম্মদ বেপারী।
এলাকার ও নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, লাল মোহাম্মদ বেপারী ১৯৪১ সালের ২০ জানুয়ারী কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামে ফৈজদ্দিন বেপারী ও মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে মাদ্রাসার ভর্তি হয়ে আলিম পাস করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে কাজীবাকাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে বিজয়ী হয়। তখন এলাকার গরিবের বন্ধু হিসেবে পরপর আরো দুই বার বিনা প্রতিদ্বন্ধীয় একই ইউনিয়ন থেকে মেম্বার পদে বিজয়ী হয়। ব্যক্তি জীবনে লাল মোহাম্মদ বেপারী কালকিনি উপজেলার ধজী হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় মৌলভী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তার বয়স জন্ম সনদ হিসেবে ৮০ বছর ৮ মাস ২৭ দিন।
আরো জানা গেছে, এবার কাজীবাকাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। পছন্দের প্রতীক হিসেবে চেয়েছেন ঘোড়া মার্কা। এতো বৃদ্ধ বয়সে প্রার্থী হওয়ায় তার সন্তানরা সায় দেয়নি পিতার নির্বাচনকে। তবে তার দুই ছাত্র নূর মোহাম্মাদ বেপারী ও আব্দুর ছাত্তার খান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব ও সমর্থকনকারী হয়েছেন। নির্বাচনে জামানাত খরচ, পোস্টার ছাপানো, বিতরণ সবই নিজের জমানো টাকা থেকে খরচ করবেন বলে তার দাবী।
লাল মোহাম্মদ বেপারী হাঁসি মুখে বলেন, ‘আর কয় দিন বাচুম। সামনের নির্বাচন নাও পাইতে পারি। তাই নিজেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। জনগণ ভোট দিলে কাজ করে দেখাইয়া যাইতে পারবো। এর আগেও তিনবার মেম্বার ছিলাম। তখন মানুষ আমাকে ‘গরীবের বন্ধু’ বলে ডাকতো। আবারও গরীবের বন্ধু হবো।’ বৃদ্ধা লাল মোহাম্মদ আক্ষেপ করে আরো বলেন, ‘আমরা যখন মেম্বার-চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন গরীবের হক মাইরা খেতাম না। যা সরকারীভাবে আসতো, সবই গরীব-দুঃখীকে বিলিয়ে দিতাম। এখন চোর-বদমাইশ নির্বাচন করে জিতে আর জনগণের দিতে তাকায় না। তাই শেষ জীবনের প্রার্থী হয়েছি, জয়ী হলে দেখাইয়া দিবো, চেয়ারম্যানী কিভাবে করতে হয়।’ এসময় হাঁসির ঝলক ফুঁটে উঠে লাল মোহাম্মদ বেপারীর চোখে-মুখে। তিনি এবার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। লাল মোহাম্মদ বেপারীর স্ত্রী মারা গেছে প্রায় ১০ বছর আগে। চাকুরী থেকে অবসরে গেছেন তাও ১৫ বছর হবে। এ সময়ে চেয়ারম্যানের মতো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তার সমর্থনকারী ও ছাত্র আব্দুর ছাত্তার খান বলেন, ‘স্যারের মতো একজন নিবেদিত মানুষ তাকে সমর্থন দেয়াও ভাগ্যের বিষয়। সে আমাকে অনুরোধ করায় আমি না বলেনি। এলাকায় এ নিয়ে হাঁসাহাসি হবে, তবুও শান্তি পাচ্ছি তাকে সমর্থন তো দিয়েছি। তার পরিবার আমাকে না বলেছে, কিন্তু আমি শুনেনি কারো কথা। দেখা যাক, তিনি নির্বাচনে কি করতে পারেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচনে যদি সুষ্ঠু কোন নাগরিকের বয়স ২৫ এর উপরে হয়, তাহলে সে বৈধ প্রার্থী হবেন। এখানে ২৫-এর উপরে যত বয়স হোক, কোন সমস্যা নেই। লাল মোহাম্মদ বেপারী মনোনয়নপত্র গত রবিবার বিকেলে ৪টার দিকে জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী আচারণবিধি মেনে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে কালকিনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মনোনয়নপত্র দালিখের শেষ দিন ছিল রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আগামী ১১ নভেম্বর এ উপজেলায় ভোগগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কাজীবাকাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।