বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

লাইফস্টাইল ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ অনলাইন:: ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’-বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য ধরে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। সারা বিশ্বে জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে একে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) ১৪ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন শুরু হয়।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেই থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সে হিসাবে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এবং ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও অনেক বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম।

কিন্তু আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে উচ্চ হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। পদক্ষেপ নিলে এ রোগকে অনেক বিলম্বিত করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুজন নতুন ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়!

আইডিএফ ডায়াবেটিস অ্যাটলাস ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান ও তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ দশমিক ৩ কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ দশমিক ৩ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক ৭ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।

এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। ১২ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালে বিশ্বের ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মারা যান।

২০২১ সালে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় ডায়াবেটিসের কারণে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ৯ শতাংশ।

কারও ডায়াবেটিস হলে ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে না পারায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে করে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রকাশিত হতে থাকে।

নিউইয়র্কের ওয়েল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের একটি গবেষণায় জানা যায়, সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি খাবারের ক্রমানুক্রমের উপরেও রক্তের শর্করার পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে।

গবেষকদের দাবি, কার্বোহাইড্রেট প্রথমে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ যতটা বৃদ্ধি পায় তার তুলনায় আগে শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অনেকটাই কম থাকে। আগে প্রোটিন ও শাক-সবজি খেলে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দু’ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ।

খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব পড়ে বার্ধক্যজনিত লক্ষণ, দেহের ওজন এবং হরমোনের ভারসাম্যের উপরেও। গবেষকদের দাবি, প্রোটিন এবং শাক-সবজি আগে খেলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের আগেই শরীরে পৌঁছে যায় ফাইবার। এতে পরিপাকের গতি ধীর ও স্থির হয় এবং আচমকা দেহের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এই পদ্ধতিতে খাবার খেলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য যেমন বজায় থাকে, তেমনই কমে প্রদাহ, ভালো থাকে ত্বকও। ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে কম।

প্রতিদিনের অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া- এইসবই কিন্তু ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ডায়েটে এমন কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা রক্তে শর্করার বর্ধিত স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে তা হলো: ডায়াবেটিস গাছ গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স, চর্বিযুক্ত মাছ, শাকসবজি, ভিটামিন সি, ডিম, ডুমুর, মটরশুঁটি, টকদই, চিয়া সিডস, ফ্ল্যাক্সসিডস, করলা, আমের পাতা, মেথি।

ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন যারা, এখনই ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করুন। নিয়মিত সুগারের লেভেল দেখুন। সারাদিনে অন্তত ঘণ্টাখানেক সময় রাখুন হাঁটার জন্য। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নিয়ম মেনে ওষুধ খান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com