সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

আইসিইউতে চবির ৩ শিক্ষার্থী, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও চবি সংবাদদাতা:: স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রশাসনিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজ চলছে।

গত দুদিন ধরে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে ২২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরের দুটি বেসরকারী হাসপাতালে অন্তত ১৩৫ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন ৪৭ শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, গতকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের বাস নিয়মিত সূচিতে চলাচল করছে। আগামীকালকের ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুত জানানো হবে।

দুদিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেকে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সমালোচনা করেছেন।

এ বিষয়ে উপচার্য বলেন, আমি রোববার বিষয়টি বাতিল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে এক্সপার্টরা চলে আসায় আমরা বাতিল করতে পারিনি। এছাড়া, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচসহ আরো বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভালো পরিবেশ গড়ে তুলেছি ক্যাম্পাসে। সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে ভালো চলছে। হার্ভাড, এমআইটির স্কলাররা এখানে সেমিনার দিচ্ছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ আমরা মিটিং ডেকেছি। সেখানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য যেটা ভালো সেটাই করা হবে। তবে চাকসুর তফসিল ঘোষণা করার পরেই এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছি। কাজেই এখানে নানারকম চিন্তার বিষয় আছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. ফজলে রাব্বী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়দের হামলায় গুরুতর আহত তিনজন ছাত্র হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান ভর্তি আছেন বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে। নগরীর পার্ক-ভিউ হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন মামুন নামের এক ছাত্র। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন পলাশ নামের আরেক ছাত্র।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আলাউদ্দিন জানান, শনিবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ১১০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া, নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং পার্ক ভিউ হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ জন পার্কভিউ হাসপাতালে ও ১ জন ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন।

চমেকসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রদের আঘাত সম্পর্কে চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, অধিকাংশ ছাত্র ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন। অনেক ছাত্রকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। আইসিইউতে থাকা দুই শিক্ষার্থীকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। অনেক ছাত্রের হাত ভেঙে গেছে বড় লাঠির আঘাতে।

চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. ফজলে রাব্বী জানান, আহত সকল শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি চসিক মেয়রের: চবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

গতকাল চমেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, শিক্ষাঙ্গনে এমন সহিংসতা কখনোই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরি, যাতে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা যায়। শিক্ষার পরিবেশ অশান্ত করে যারা সহিংসতা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার পর তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভবনের দারোয়ান তাকে মারধর করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতের পর রবিবার দ্বিতীয় দফায় সংঘাতে জড়ায় স্থানীয় লোকজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন, যা আজ রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com