বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন

৭ কলেজের সমন্বয়ে হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, আলোচনায় যেসব নাম

সাত কলেজের নতুন নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

অনলাইন ডেস্ক:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত বিশেষ কমিটি ইতোমধ্যে নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। সবকিছু ছাপিয়ে এবার আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। এ জন্য আলোচনায় রয়েছে পাঁচটি নাম। দুটি নামের বিষয়ে খোদ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন।

মূলত প্রচলিত শিক্ষার মানোন্নয়ন, সময়োপযোগী শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজ সাতটি হচ্ছে— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ। পরবর্তী সময়ে কলেজগুলো পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও অদূরদর্শিতার অভিযোগ ওঠে। যার ধারাবাহিকতায় গত বছরের অক্টোবর মাসে মাঠে নামেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তারা সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানান। দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বর মাসে গঠন করা হয় বিশেষ কমিটি। ওই কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় ধরে সম্ভাব্যতা যাচাই, ক্যাম্পাস পরিদর্শন, সম্মানজনক পৃথকীকরণের রূপরেখা প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন।

সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের কাছে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আহ্বান করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগ্রহী ব্যক্তিরা ইউজিসির info@ugc.gov.bd ই-মেইলে নামের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। আজ (রোববার) নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত করতে ইউজিসিতে মতবিনিময় সভা ডাকা হয়েছে। সেখানই চূড়ান্ত করা হবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

আলোচনায় রয়েছে যেসব নাম

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী চাইছেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হোক ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অথবা ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। এরপর নতুন নাম হিসেবে আলোচনা রয়েছে ‘বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অথবা ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। এছাড়া ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’, ‘ঢাকা মহানগর ইউনিভার্সিটি’ এবং ‘ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামগুলোর পক্ষেও মতামত দিয়েছেন অনেকে।

রোববার চূড়ান্ত হবে নাম

গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকীকরণ এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে আগামী রোববার (১৬ মার্চ) একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কনফারেন্স রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের ‘প্রস্তাবিত’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত সভাগুলোতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত টিমলিডারদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সদস্য, সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও ছাত্র প্রতিনিধি টিমলিডারদের উপস্থিত থাকার জন্যও বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, নাম বাছাইয়ের পর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেটি জানানো হবে। সেটি তাৎক্ষণিকভাবে হতে পারে কিংবা পরবর্তী সময়েও হতে পারে।

ইউজিসির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এটি দেশের উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে সহায়ক হবে। কারণ, সাত কলেজ বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে আসছে। এমন অবস্থায়, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ও প্রগতিশীল শিক্ষার সুযোগ তৈরি হবে।

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষা সিন্ডিকেটের ভয়ংকর শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। যার প্রত্যাশা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে করছিলেন। রোববার তার নাম চূড়ান্ত করা হবে।

‘আসলে সাত কলেজের প্রতিটি কলেজে শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, আধুনিক শিক্ষক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ দরকার। আমরা আশা করছি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের মাধ্যমে কলেজগুলো একীভূত হবে, যার ফলে আরও উন্নত শিক্ষাদান ব্যবস্থা তৈরি হবে। একই সঙ্গে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিসর বাড়বে এবং শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বৈচিত্র্য আনাও সম্ভব হবে।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য আরও বিস্তৃত পাঠ্যক্রম, গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি হবে— মনে করেন এ শিক্ষার্থী।

সুমাইয়া মীম নামের ইডেন মহিলা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন নামটি কলেজগুলোর ঐতিহ্য এবং আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে। তবে, নামটি এমন হতে হবে যা শুধু ঢাকা শহরের নয়, বরং সারা দেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করবে।

‘আমরা আশা করছি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে একটি সৃজনশীল এবং জ্ঞানভিত্তিক পরিবেশ তৈরি হবে। যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী ও উন্নত করবে। সরকারের এ পদক্ষেপ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। যা সামনের দিনে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com