সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:: জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ছাত্রনেতৃত্বের কর্মকান্ডে যে ইতিবাচক মনোভাব ছিল, তাতে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে বিএনপি। এরপরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে তাদের সঙ্গে কোনো সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াবে না দলটি। বরং ধৈর্য ও সহনশীলতা দেখিয়ে যাবে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) গত বুধবার সংঘর্ষের পর বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন বার্তা পাওয়া গেছে।
বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রশিবির তাদের কার্যক্রম প্রতিটি ক্যাম্পাসে অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ছাত্রদলকে তারা কোনো অবস্থায় রাজনীতি করতে দিতে চায় না। এ কারণে তারা (ছাত্রশিবির) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তুলছে। এ অবস্থায় সব কিছু জানার পরও তারা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে। এ জন্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশও করেছে সংগঠনটি। আবার সমালোচনাও করেছে বৈষম্যবিরোধীদের। তারা দাবি করেন, এই সংঘর্ষের জন্য ছাত্রশিবির দায়ী। এই সংগঠনটি গুপ্ত রাজনীতি করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে।
ছাত্রদল নেতারা বলেন, তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালালে সাধারণ জনতা যুক্ত হয়ে ছাত্রশিবিরকে প্রতিরোধ করে। এর মাধ্যমে তাদের প্রতিরোধ করার সামর্থ্য দেখানো হয়েছে। আবার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত যুবদলের স্থানীয় একজনকে বহিষ্কার করে সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি।
ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামনের দিনে ছাত্রদলকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে খাটো করার চেষ্টা করবে। এ সুযোগ দেওয়া হবে না। এমন কোনো কর্মকান্ড ছাত্রদল করবে না, যাতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা যায়। ফলে ছাত্রশিবিরের ষড়যন্ত্রে পা দেবে না তারা।
ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, সব কিছুর পেছনে রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন পেছাতে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো ধরনের বিরোধ ও সহিংসতা এড়িয়ে চলতে চান তারা। কারণ বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নামলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে তৃতীয় পক্ষ, যা বিএনপির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করে দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, আমরা চাই, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমান ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিক। তিনি (ড. ইউনূস) যাতে নির্বাচন দেন, সে জন্য তার ওপর আমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এই সরকার ব্যর্থ হোকÑ এটা কোনো অবস্থায় আমরা চাই না। সে জন্য ধৈর্য ধরে পথ চলবে বিএনপি।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতার সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণœ রেখেই নির্বাচন আদায় করতে চান। তাই সরকারের ওপর রাজনৈতি চাপ তৈরি করলেও তার প্রতি অসম্মান হোক এমন কিছুই করছেন না। একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রমেরও সমালোচনা করবে বিএনপি। তবে সেটি সংঘাতে জড়ানোর মতো পরিস্থিতি নিতে চাইবে না তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করা মানেই তাদের অসহযোগিতা করা নয়। আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় বলে দেবে, নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিকে কঠোর হতে হবে কি না?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচনী আবহও তৈরি করতে চায় তারা। পাশাপাশি রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালা করে যাচ্ছে, যাতে বিএনপির এই উদ্যোগের বিষয়ে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা যায়।
বিএনপির কর্ম-কৌশলের প্রণয়নে যুক্ত এক নেতা বলেন, রমজানের আগেই সমাবেশ শেষ হবে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা হবে। রমজানে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকবেন দলের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে রমজান-পরবর্তী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে দলের নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তার এই বক্তব্যে বিএনপি আশ্বস্ত। তবে নির্বাচন নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর নেতিবাচক মনোভাব আছে। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করে রোডম্যাপ আদায় করতে চায় বিএনপি। নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়কে কেন্দ্র করে তাদের সব রাজনৈতিক কৌশল তৈরি হচ্ছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রনেতৃত্বকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সতর্ক অবস্থায় আছেন তারা।
বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে একটি পক্ষ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। এক্ষেত্রে তারা গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে নতুন দল গঠন প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করছেন। সরকারে থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দল গঠন করা হচ্ছে বলে বিএনপি থেকে অভিযোগও করা হচ্ছে।