রবিবার, ২০ Jul ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বিএনপি নেতার স্ত্রীর আহাজারি ॥ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার স্বামীর কাল হলো

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বিএনপি নেতার স্ত্রীর আহাজারি ॥ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার স্বামীর কাল হলো

নিজস্ব  প্রতিনিধি, নবাবগঞ্জ॥ সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে নিহত বিএনপির নেতা ও শিক্ষক হারুনুর রশিদের স্ত্রী শিক্ষিকা নাহিদা পারভীন স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় তিনি কাতর কণ্ঠে বলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই আমার স্বামীর জীবনে কাল হয়েছে। স্বজন সহকর্মী ও স্বামীর রাজনৈতিক সহপাঠিরা ভীড় করেছে নিহত হারুনের বাড়ি বাহ্রা গ্রামে।

একজন রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষককে হত্যার ঘটনায় ওই ইউনিয়নসহ সারা দোহারে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে নামাজ পড়ে বাড়ির পাশে নদীর ধারে হাটতে গেলে হারুন মাষ্টার সন্ত্রাসীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল ৬থেকে সাড়ে ৬টার ধোয়াইর বাজারের পাশে পদ্মা নদীর তীরে বাঁধের রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন হারুন মাষ্টার। এসময় পিছন থেকে আসা দুটি মটরসাইকেলে ৫ যুবক এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যবসায়ী সকালে দোকানে যাবার পথে নদীর পাড়ে হারুনকে পড়ে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেয়। এরপর স্থানীয় লোকজন গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত্যু ঘোষনা করেন।

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বিএনপি নেতার স্ত্রীর আহাজারি ॥ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার স্বামীর কাল হলো

এদিকে হারুন মাষ্টারকে গুলি করে হত্যার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভীড় করে। তাঁরা তাৎক্ষনিক এ হত্যার বিচার ও খুনিদের খুঁজে বের করার দাবিতে বিক্ষোভ করে।

ঘটনার পরই দোহার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রেরণ করে।

এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আলী বলেন, হারুন মাষ্টারের শরীরে ৪টি গুলি ও তিনটি ধারালো অস্ত্রের জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তাঁকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কুপানো হতে পারে। তিনি আরো বলেন, অপরাধীদের খুঁজে বের করতে র‌্যাব পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন মাষ্টার(৬৫) দোহার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য শিক্ষক। তিনি বাহ্রা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে।

হারুন মাষ্টারের ভাতিজা মো. শাহিন বলেন, প্রতিদিনের মতো ভোরে নামাজ শেষে চাচায় হাটঁতে বের হয়। এসময় কয়েকজন যুবক তাঁকে গুলি করে ফেলে রেখে যায়। তবে এখনো এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে তা জানা যায়নি।

হারুনুর রশিদের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি আগামী ইউপি নির্বাচনে নয়াবাড়ী থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার কথা ছিলো। এছাড়া এ অঞ্চলের কিছু মাটি ব্যবসায়ীদের অন্যায় কাজকে আমার ভাই প্রশ্রয় না দেয়ায় তাঁকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি এঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে সঠিক বিচার দাবি করেন।

তবে বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছূ দিন যাবত নয়াবাড়ীতে বিএনপির দুটি গ্রুপরে মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। সেই জের হিসেবে ঘটছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া স্থানীয় বালু ব্যবসা নিয়েও টানাপোড়েন আছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বিএনপি নেতার স্ত্রীর আহাজারি ॥ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার স্বামীর কাল হলো

নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক মেম্বার বলেন, তাঁর(হারুন) সাথে আমার সম্পর্ক ভালই ছিলো। কিন্তু কে বা করা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানি না। তবে কিছুদিন পূর্বে হারুন মাষ্টারের ছেলে শাওন ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেয়ায় এ নিয়ে ধোয়াইর বাজারে কথা কাটাকাটির জেরে সামসুলের ছেলে সজিব হাসান বাবুর সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, নির্মম এ হত্যাকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সন্ত্রাসী চক্রকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করেত পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাই। এঘটনায় যে বা যারা জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com