শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

শারজায় বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয়

শারজায় বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয়

স্পোর্টস ডেস্ক:: ২৯ বছর পর বুধবার (৬ নভেম্বর) শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে বাংলাদেশ দলের। শারজায় কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে প্রথমবার ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল শারজাতে। বুধবারের ম্যাচের আগে আরও চারটি ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হারের ইতিহাস আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শারজার ঐতিহাসিক মাঠে এই ভেন্যুর ৩০০তম ম্যাচে ৯২ রানের বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় একের পর এক ম্যাচ হারছে বাংলাদেশ দল। চলতি বছর খুব বাজে সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে আশা করা হচ্ছিল, নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে খেলতে নেমে দৃশ্যপট হয়তো পাল্টে যাবে, কিন্তু কিছুই বদলালো না। ৮ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নেমে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানদের বিপক্ষে বড় ধরনের হোঁচট খেলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে আফগানিস্তানকে ২৩৫ রানে বেঁধে ফেলার পরও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এই পরিণতি।

আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৩৬ রান খুব কঠিন কোনও লক্ষ্য নয়। দলীয় ১২ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙলেও শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার মিলে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৫৪ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়ে আউট হন সৌম্য। দেখেশুনে খেলতে থাকা সৌম্য হুট করেই যেন মনোযোগ হারিয়ে ফেললেন। সৌম্যর বিদায়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন অধিনায়ক শান্ত।

কিন্তু হুট করেই মাথায় ভূত চাপলো শান্তর! মোহাম্মদ নবীর অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি বেশ দূর থেকে সুইপ করার চেষ্টা করতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিলেন। তিনবারের চেষ্টায় বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাশমাতউল্লাহ শাহিদি বাংলাদেশের অধিনায়কের বিদায় নিশ্চিত করেন। ১২০ রানের মাথায় শান্ত বিদায় নেওয়ার পরই মূলত মোড়ক লেগে যায়। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহও আনাড়ি শট খেলে আউট হয়েছেন।

রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী কিংবা ফজল হক ফারুকীকে পড়াশোনা করে এসেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। কিন্তু পরীক্ষা দিতে হলো আফগান স্পিনার মোহাম্মদ গজনফরের বিরুদ্ধে। সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন পেয়েই বোধ হয় গড়বড় করে ফেললেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা!

১২০ এ তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ ১৪৩ রানে অলআউট। মাত্র ২৩ রানে বাংলাদেশ দল হারায় আটটি উইকেট। আফগান স্পিনার গজনফরের ঘূর্ণিতে ধসে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে আফগানিস্তানের জয়ও নিশ্চিত করলেন আফগান ডানহাতি এই স্পিনার। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে নেমেই পেলেন প্রথম ফাইফারের দেখা। ২৬ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে আফগানিস্তানকে সিরিজ এগিয়ে দেওয়ার নায়ক তিনিই। দারুণ বোলিংয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরাও।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের এই ব্যর্থতার শেষটা কোথায়? ভারত সিরিজের পর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই দশা। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল আফগানদের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতার এই গেরো কাটাতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু কিছুই হয়নি, ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ক্রিকেটে বারবারেই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ছয়টি ওয়ানডেই জিততে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমটিতে হেরে বাকি ম্যাচগুলোতে শঙ্কা এঁকে দিলেন। ব্যাটাররা তাদের ব্যর্থতা থেকে বেরোতে না পারলেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হবে না।

কেননা, বোলাররা বরাবরই নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক মতোই করে আসছেন। আজকের ম্যাচেও বোলারদের দাপট লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের প্রথম ওয়ানডের টস হতেই দারুণ রেকর্ডের মালা পরলো শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। প্রথম ভেন্যু হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০০তম ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করলো স্টেডিয়ামটি। এখানেই বুধবার তপ্ত মরুর বুকে বাংলাদেশের পেসাররা তোপ দাগান। বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ে আফগান ব্যাটাররা রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখা শুরু করেন। ১ উইকেটে ৩০ রান থেকে মুহূর্তেই ৪ উইকেটে ৩৫ রানে পরিণত হয় আফগানরা।

পঞ্চম উইকেটে হাশমতউল্লাহ ও গুলবাদিন নাইব জুটি বড় করার চেষ্টা করেন। ২০তম ওভারে গুলবাদিনকে (২২) ফিরিয়ে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানরা। ষষ্ঠ উইকেটে হাশমতউল্লাহ ও নবীর ১২২ বলে ১০২ রানের জুটিতেই মূলত প্রতিরোধ গড়েন তারা। হাশমতউল্লাহ ৫২ রান করে আউট হলেও সেঞ্চুরির পথে ছিলেন নবী। দলের স্কোর বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ৪৮তম ওভারে তাসকিনের শিকার হন নবী। ৭৯ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হন আফগান এই অলরাউন্ডার। এই দুই জনের ব্যাটের ওপর ভর করেই আফগানিস্তান ২৩৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়।

বাংলাদেশের বোলাররা যেভাবে শুরু করেছিল, মাঝের ওভারগুলোতে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি। এই সুযোগে বড় জুটি গড়ে ফেলেন নবী ও হাশমতউল্লাহ। তাসকিন ও মোস্তাফিজ চারটি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com