শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃঃ
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের প্রায় ৭শ আবাসিক কোয়ার্টার এখন রেলের বেদখলে। ভবনের ছাদ ও ওয়ালে ফাটল, জানালা-দরজা নেই, পাকা ছাদ আজ বিধ্বস্ত, ইটের ফাঁকে ফাঁকে আগাছা ভর্তি, স্তুপের মাঝে সামান্য পরিস্কার জায়গা, সেখানে রাতের আধাঁরে চলছে অসামাজিক কাজ। সন্ধ্যার পর ভবনের পাশে ঘেঁষে চলতে গা শিউরে ওঠে। দেখে মনে হয় ভুতুড়ে বাড়ি। এসব ভুতুড়ের বসবাসকারী ভবনগুলো রেলওয়ে আবাসিক কোয়ার্টার। পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত কোয়ার্টারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু অসহায় পরিবার জীবন যাপন করছেন। শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে লালমনিরহাট রেলওয়ের অধিকাংশ আবাসিক কোয়ার্টারের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। লাল রংগের উন্নতমানের কোয়ার্টারগুলোতে থাকছে কারা ?
রেল বিভাগীয় শহর লালমনিরহাটে রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোর্য়াটারের সংখ্যা ৯১০টি হলেও ৭০০টি কোয়ার্টার রেলের বেদখলে। পুরনো এবং জীর্ণ অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ঘোষনা করা হয়নি পরিত্যাক্ত।
রেলষ্টেশন সূত্র জানায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে জেলার সীমানা জুড়ে ১২টি ষ্টেশন রয়েছে। এসব ষ্টেশন সংলগ্ন আবাসিক কোয়াটারের ষ্টেশন মাষ্টারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য রেল বিভাগের রয়েছে পর্যাপ্ত আবাসিক কোয়ার্টার। বর্তমানে যার অধিকাংশ কোয়ার্টারই রয়েছে বহিরাগতদের দখলে। লাল রংয়ের এই ভবনগুলো বিট্রিশ আমলের তৈরী। যার অধিকাংশগুলো জীর্ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এই ভবনগুলোতে রেলের কর্মকতা ও কর্মচারীরা না থাকায় যে যার মত করে দখল করে রয়েছে। ফলে ভবন ধসে পরার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বসবাস করছেন বহিরাগতরা। সেই সাথে চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবনের ইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। বহিরাগতদের দখলে থাকা এইসব আবাসিক কোয়ার্টারে মাদক ব্যবসাসহ নানান অনৈতিক কাজের অভিযোগ অনেক পুরোনো হলেও যেন দেখার নেই কেউ। তবে বার বার উচ্ছেদ করা হলেও বেদখল হওয়া কোর্য়াটারগুলো দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানালেন ভবনগুলোর রক্ষনাবেক্ষন কারী কর্মকর্তা। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোয়ার্টারগুলো এখন সাধারণ মানুষের কাছে মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কোয়ার্টারে রাতের আধাঁরে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা যুবকরা কোয়ার্টারের ইট, রড, কাঠ, দরজা-জানালা অবাধে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। (যার বড় প্রমাণ হল, ফায়ার সার্ভিস রোডস্থ পুরাতন রেলওয়ে সিনেমা হলের সম্পদ লোপাট)। আবাসিক কোয়ার্টারেই অবৈধ নয় পাশাপাশি অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। একারণে সরকার রেলওয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আজ খোয়াত যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখেন যে, আবাসিক কোয়ার্টার গুলোতে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মুহুরী, মুদিদোকানদার, বাস-ট্রাক চালক, হেলপার, হকার, এনজিও কর্মী, শ্রমিক ও দিনমজুররা দিব্বি বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছেন। এসব বসবাসকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এক শ্রেনীর রেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অলিখিত ভাবে কোয়ার্টারগুলো মাসিক ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। যার ভাড়ার টাকা কোন দিনেই সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে না।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট রেলওয়ে আবাসিক কোয়ার্টার রক্ষণাবেক্ষন অফিসার জানান, আবাসিক কোয়ার্টার গুলো কোনভাবেই দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে অবৈধ দখলমুক্ত করতে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। তবে বিধ্বস্ত কোয়ার্টারগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোন কাজ হচ্ছে না। সরকারী এই ভবন গুলোর সঠিক রক্ষনাবেক্ষন এবং ঝুকিপূর্ণ ভবন গুলো পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে নতুন ভবন নির্মাণ করবে কর্তৃপক্ষ এমনটিই প্রত্যাশা করেছেন স্থানীয় রেলওয়ের কর্মচারীরা।