সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
যশোর প্রতিনিধি, একুশের কণ্ঠ:: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারলে সবার আগে দেশ পুনর্গঠন করবে। তিনি বলেন, বিএনপি রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশ পুনর্গঠনের কথা ও ৩১ দফা ঘোষণা করেছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালিতে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীদের খুন, গুম এবং দেশে লুটতরাজ করে। তখন নানা ধরনের নির্যাতনের মুখে বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল রাজপথে থেকে লড়াই করেছে।
তিনি বলেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। বিগত সময়ে তাদেরকে রাজপথে পাওয়া যায়নি। একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে এবং ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে দেশ পুনর্গঠন করবে। ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত করা বিএনপির মূল লক্ষ্য বলে জানান তারেক রহমান। কৃষকের উৎপাদন, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করাও বিএনপির লক্ষ্য। জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব করবে বিএনপি।
জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না দাবি করে তারেক রহমান বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন জরুরি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিগত ১৭টি বছর আন্দোলন করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার অসিলায় তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এ জন্য আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধার খুঁজে বের করার ওপর জোর দেন তারেক রহমান। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধার খুঁজে বের করব। আমাদের অনেক কাজ। দেশকে পুনর্গঠনের কাজ।
দেশের সামনে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের ৩১ দফা রূপরেখা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ভিারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সেটির মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে করব, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া আছে। এই দেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কৃষির জন্য আমরা কী কী করতে চাই, তার কথাও উল্লেখ করা আছে। সমগ্র দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য আমরা কী করতে চাই, সেই কথাগুলো বলা আছে রূপরেখায়।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করেন চেরায়পার্সনের উপদেষ্টা আমন উল্লাহ আমান।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, যশোর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।
বিএনপির সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোট গ্রহণ শুরু হয় যশোরের আলমগীর সিদ্দিকি হলে।
সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দলের সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল বারী রবু। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।