বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি::
সময়মত কৃষকদের আখের মূল্য পরিশোধ করতে না পারা ও দীর্ঘ মেয়াদি ফসল চাষে প্রান্তিক চাষীদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলাসহ বহুবিধ কারনে দক্ষিণনাঞ্চলের অন্যতম ভারী চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের আওতাধীন ৮ টি সাবজোনে দিন দিন আখ চাষ কমে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের চিত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ সময় আখ রোপনের জন্য চাষীদের ১ কোটির অধিক টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হয়েছে। এবার আখ চাষীদের ধরে রাখতে মিল কর্তৃপক্ষ আখে মূল্য মণ প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন।
সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জিব কুমার দত্ত জানান, আখ চাষীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মৌসুম থেকে মিল গেট ও আখ ক্রয় কেন্দ্রে মণ প্রতি ১৫ টাকা বেশি দরে আখ কেনা হবে। বর্তমানে ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মৌসুমে মিল গেটে আখ কেনা হচ্ছে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১২৫ টাকা। আর বহিঃকন্দ্রে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১২২ টাকা ৩৬ পয়সা দরে।
আগামী ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মৌসুমে মিল গেট এলাকায় প্রতি মণ ১৪০ টাকা দরে এবং বহিঃকেন্দ্রে প্রতি মণ ১৩৭ টাকা ৩৬ পয়সা দরে ক্রয় করা হবে। অর্থাৎ আগামী মৌসুম থেকে আখ চাষীরা মণ প্রতি ১৫ টাকা করে আখের দাম বেশি পাবেন।
মিল সূত্রে জানাগেছে, ২০১০-১১ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে অর্জন হয় ৭ হাজার ৪শ ৫৪ একর। ২০১১-১২ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৭ হাজার ৮ একর। ২০১২-১৩ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জন হয় ৮ হাজার ৫শ একর। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৩ হাজার ৩শ ২৬ একর। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মিলটি ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সেখানে অর্জন হয়েছে ৪ হাজার ৮শ ৮৩ একর।
২০১৫-২০১৬ মৌসুমে ১০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধান করা হয়। সেখানে অর্জ হয় ৪ হাজার ৯৪১ একর। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ মৌসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৯ হাজার একর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৮০ একর। গত ৭টি মাড়াই মৌসুমের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোন মৌসুমেই আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
দিন দিন আখ চাষ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) সঞ্জিব কুমার দত্ত বর্তমান (এমডি), বলেন, কৃষকরা মিলে যে আখ বিক্রি করছে, চিনি বিক্রি না হওয়ায় সেই টাকা কৃষকদের সময়মত পরিশোধ যাচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমানে কৃষকরা স্বল্প মেয়াদি ফসল করতে আগ্রহী হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদি ফসল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এসব কারনে আখ চাষ কমে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরো জানান, মিলটিকে ৮ টি সাবজোনে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সাবজোনে ২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া ইউনিট পর্যায়ে রয়েছেন ১ জন সিডিএ। তারা সার্বক্ষনিকভাবে কৃষকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, দলীয় সভা, উঠান বৈঠাক, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং এর মাধ্যমে কাউন্সিলিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া কৃষকদের এসটিপির পদ্ধতিতে আখ রোপনের জন্য ২০১২-১৩ মৌসুমে ২৫ লাখ ১০ হাজার ৭শ ৯৬ টাকা, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ২শ ২২ টাকা, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭শ ৮৫ টাকা ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষদের আখ রোপনের জন্য সার,কীটনাশক ও নগদ টাকা ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
হিসাব অনুযায়ি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ২০১২-১৩ মৌসুমে। সে সময় ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ হয় আর অর্জন হয় ৮ হাজার ৫ একর। এবং সবচেয়ে কম আখ রোপন হয়েছে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ৩ হাজার ৩শ ৩৬ একর জমিতে।
এ ব্যাপারে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জিব কুমার দত্ত বলেন, বিভিন্ন কারনে আখ চাষ কমে যাচ্ছে এটি সত্যি। তবে আখের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সুগার মিল এলাকার আখ চাষির সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে আখের চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এজন্য আখচাষীদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে