মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

মুন সিনেমা হলের মালিককে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

ই-কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:: পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিককে তিন কিস্তিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল। সেই সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দিলেন আদালত।

আদালত মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড কোম্পানিকে ৯৯ কোটি টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতি নির্দেশ দেন। এরমধ্যে প্রথম ২ মাসের মধ্যে ২৫ কোটি। পরের ২ মাসের মধ্যে আরও ২৫ কোটি এবং বাকি টাকা আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।

এর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং এর ওপর যে স্থাপনা ছিল, তার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল মামলার চূড়ান্ত রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটের মুন সিনেমা হল মূল মালিককে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা ছিল।

এ সিনেমা হলের জায়গাটি ২০০১ সালে ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দান করে। কল্যাণ ট্রাস্ট আবার ডেভেলপার কোম্পানি নিয়োগ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে। ডেভেলপার কোম্পানি আগের সিনেমা হল ভেঙে এখন সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ডেভেলপারের অংশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে।

১৯৬৪ সালে ১১ ওয়াইজঘাট ঠিকানায় মুন সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর সিনেমা হলটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। সিনেমা হলটি ফেরত পেতে হাইকোর্টে প্রথম রিট হয় ১৯৭৬ সালে।

হাইকোর্ট ১৯৭৭ সালের ১৫ জুন মুন সিনেমা হলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সিনেমা হলটি ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হলে ১৯৯৭ সালের ৭ অক্টোবর মার্শাল ল রেগুলেশন জারির মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তির সম্পূরক বিধান জারি করা হয়। ওই বিধানে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করা হয়। এরপর বেশ কয়েকবার মুন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি ফেরত চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে। কিন্তু মার্শাল ল রেগুলেশনের সম্পূরক বিধানের কারণে ব্যর্থ হয়।পরে মার্শাল ল রেগুলেশন প্রত্যাহারের দাবিতে কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে হাইকোর্টে আবারও রিট মামলা করে।

১৯৯৪ সালের ৭ জুন হাইকোর্ট এ আবেদনটি খারিজ করে রায় দেন। পরে ২০০০ সালে ৫ম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং মুন সিনেমা হল ফেরতের দাবিতে হাইকোর্টে রিট মামলা করা হয়। এরই মধ্যে ২০০১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট মুন সিনেমা হলের জায়গায় মুন কমপ্লেক্স তৈরির জন্যে ডেভেলপার কোম্পানি বাবুলী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বাবুলী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড সাত তলা ভবন নির্মাণের পর তা সেলামি মূল্যে বিক্রির পর ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করবে। এরপর ট্রাস্ট সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাত তলা ভবনের বিশাল কমপ্লেক্স তৈরি করেছে। এ কমপ্লেক্সে প্রায় ১১শ’ দোকান রয়েছে। এ অবস্থায় ২০০৫ সালে হাইকোর্ট ৫ম সংশোধনী বাতিল করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com