বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন
ই-কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:: সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে। এ সংশোধনীর ফলে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মেয়াদ আরও ২০ বছর বাড়বে। এ ছাড়া অনুমোদনের জন্য আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর চূড়ান্ত খসড়া উত্থাপন করা হতে পারে। খসড়াটি অনুমোদনের পর সংসদে পাস হলে রহিত হবে বহুল আলোচিত-সমালোচিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা।
এর আগে তিন দফায় ৩৫ বছর বেড়েছে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ। ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীতে নারী আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। ২০০৯ সালে ৪৫ থেকে তা ৫০ করা হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে শেষ হবে নারী আসনের ১০ বছর মেয়াদ। এবার ২০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হতে পারে।
সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া দশ বৎসর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাংগিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে।’
সংবিধান অনুযায়ী ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন এবং সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী সংসদের অর্থাৎ, নবম সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে দশ বছর।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসেবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০-এ উত্তীর্ণ করা হলেও ওই সময় আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।
সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই সংশোধনে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন।
এদিকে আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর চূড়ান্ত খসড়া উত্থাপন করা হতে পারে। খসড়াটি অনুমোদনের পর সংসদে পাস হলে বহুল আলোচিত-সমালোচিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা রহিত হবে।
আগে ২০১৬ সালের আগস্টে কয়েকটি পর্যবেক্ষণসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। এর আগে থেকেই ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে ছিল আলোচনা ও সমালোচনা। এই ধারার অপপ্রয়োগ করে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে এই ধারাটির যথেচ্ছ ব্যবহারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে বলেও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে। পরে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবির মুখে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রতিশ্রুতি দেন ৫৭ ধারা রহিত হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও স্বীকার করেন, ৫৭ ধারার অপব্যবহার হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, ৬২ ধারা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে। তবে সমালোচনা সত্ত্বেও ৫৭ ধারায় যে কর্মকাণ্ড অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় সেগুলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ধারা লঙ্ঘনে ১০ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে।
এই আইনের প্রাথমিক খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ বা এক কোটি টাকা অর্থদ বা উভয় দে র বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় এসব অপরাধের শাস্তি কমিয়ে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক খসড়ায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো একাধিক ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় তা একটিমাত্র ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মহাপরিচালকের ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত নতুন বিধান যোগ করা হয়েছে চূড়ান্ত খসড়ায়। ৫৪ ধারায় এ গুরুত্ব্ব ও দণ্ডের মাত্রা অনুযায়ী কিছু অপরাধকে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, ৫৭ ধারায় যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও সেসব ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৮’-এর খসড়াও অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে।