শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ অপরাহ্ন

মধুখালীতে তিন ফসলি জমিতে অনুমোদনহীন ইটভাটা

শাহজাহান হেলাল,মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃঃ
আইন অমান্য করে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের গোমারা গ্রামে তিন ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ইটভাটা। মেসার্স এম এম কে বি নামের ইটভাটাটি ওই এলাকার বাসিন্দা সবুর শেখ, টিটু শেখ, অরবিন্দু দত্ত ও মিটুল শেখ নির্মাণ করেছেন। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করে ইট তৈরি ও পোড়ানো হচ্ছে। অনুমোদনহীন ইটভাটা নির্মাণের ফলে পরিবেশ দুষণ বাড়ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এছাড়া ইটভাটার গাড়ি চলাচলে মাঝিবাড়ি-সীতারামপুর সড়কটি ইতিমধ্যেই বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
তিন ফসলি কৃষি জমি ধ্বংস এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। ফলে দিন দিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-তে ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি ব্যবহার করলে তার শাস্তি দু’বছর কারাদ- ও ২ লাখ টাকা জরিমানা। ওই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তি ২-১০ বছরের জেল এবং ২থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা। অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলে শাস্তি ১ বছরের কারাদ- এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। আইনে আরও বলা আছে, আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বনভূমি, জলাভূমি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের গোমারা গ্রামে ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। দেদারছে পেড়ানো হচ্ছে ইট। জনবসতী এলাকায় ইটভাটা নির্মান করায় ফলমূল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ সর্দি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইট পোড়ানো কয়লা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন-মনোক্সাইড নির্গত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।
সরেজমিনে গোমারা এলাকার মেসার্স এম এম কে বি ইটভাটায় গেলে দেখা যায়, ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ইটভাটার পাশে থাকা অনেক জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এসময় ভাটা মালিকরা কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এদিকে ইটভাটার গাড়ি চলাচলে মাঝিবাড়ি-সীতারামপুর সড়কটি ইতিমধ্যেই বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তি ইটভাটা নির্মাণ করতে চাইলে তাঁকে প্রথমে অবস্থানগত ছাড়পত্র এবং পরে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। অবস্থানগত ছাড়পত্র পাওয়ার আগে ওই জমিতে কোনো ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ নেই।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.লুৎফর রহমান বলেন, মেসার্স এম এম কে বি নামের ইটভাটা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেয়ার কারণে তাদের ইটভাটা নির্মানে সম্মতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এ উদ্যোগ নিলে সেটি বে-আইনি হবে। অবৈধ এ কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করব।
মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদা পারভীন জানান, আমার দপ্তর থেকে মেসার্স এম এম কে বি নামের কোনো ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তিন ফসলী জমিতে যদি ইটভাটা করা হয়ে থাকে আইনের দৃষ্টিতে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে শামিল হবে।
কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বাগাট ইউনিয়নের গোমারা ছোট গোপালদী মৌজায় মেসার্স এমএমকে ব্রিকস গোমারা বাগাট নামে ২একর ১০শতাংশ জমি অনুর্বর দেখিয়ে তার অফিস প্রত্যয়ন দিয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ইটভাটাটি তিন ফসলী জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। ভাটা সংলগ্ন অনেকের জমির ফসল নস্ট হয়ে গেছে। এত কিছুর পরও প্রশাসন দেখেও দেখছে না। এদিকে ভাটার গাড়ি চলাচল করায় এলজিইডির রাস্তাটি ভেঙ্গে চুড়ে একাকার হয়ে গেছে। ধুলায় এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের এনডিসি হাসান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মেসার্স এম এম কে বি নামের কোনো ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমার জমির দুই পাশের সব জমি লিজ নিয়েছেন ভাটার মালিক। আমাকেও জমি লিজ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। জমি লিজ না দেওয়ায় আমার জমির উপর ইট ও মাটি রেখে জমি দখল করা হচ্ছে।
মেসার্স এম এম কে বি ইটভাটার মালিকানা অংশিদার মিটুল শেখ বলেন, এবছরই ইটভাটা শুরু করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। তবে এসময় তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখব, অনুমোদন ছাড়া কেউ ইটভাটা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com