মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

ভারতে সু চি, রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় আসছে কি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট নতুন করে শুরু আর বাংলাদেশে লাখ লাখ শরণার্থীর ঢল নামার ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো ভারতে পা রাখলেন মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ভারত-আসিয়ান সামিটে সামিল হতে আর তার পর দিন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে (২৬ জানুয়ারি) অন্যতম প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতেই সু চি’র দিল্লিতে আসা।

বুধবার সন্ধ্যায় মিয়ানমার থেকে বিশেষ বিমানে তিনি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগের যুগ্মসচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন।

গত সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের নেপিদোয় সু চি’র সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হয়েছিল। তার পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ ঘুণাক্ষরেও আসেনি। কিন্তু এখন জানুয়ারিতে এসে ভারত সেই ‘ভুল’ শুধরে নিতে চাচ্ছে। রাখাইনের আশ্রয়চ্যুতদের ঘরে ফেরার প্রক্রিয়ায় তাদের যে পূর্ণ সমর্থন আছে সে কথাটুকু অন্তত মোদি-সু চি বৈঠকের পর ভারত পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চায়।

যদিও সু চি’র এই ভারত সফরকে পুরোপুরি দ্বিপাক্ষিক সফর বলা যাবে না, কারণ তিনি এসেছেন মূলত ভারত ও আসিয়ানের সম্পর্কের রজত জয়ন্তী উদযাপনে আসিয়ানের অন্যতম নেতা হিসেবে। এই উপলক্ষে ভারত এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশের নেতাদেরই বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, অং সান সু চি-ও তাদেরই একজন।

এবার ইন্দো-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের (যার নাম দেওয়া হয়েছে, শেয়ারড ভ্যালুজ–কমন ডেসটিনি) অবকাশে প্রতিটি আসিয়ান দেশের সঙ্গেই ভারত আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবে, মিয়ানমারও তার ব্যতিক্রম নয়। আর এবারের নরেন্দ্র মোদি-সু চি বৈঠকে রাখাইন প্রসঙ্গ নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই ভারত এ বিষয়ে একটা ভারসাম্যের কূটনীতি নিয়ে চলছিল। তাদের চেষ্টা ছিল মিয়ানমার বা বাংলাদেশ কাউকেই বেশি না চটানো। মিয়ানমারের ‘অনুভূতিকে’ মর্যাদা দিয়ে ভারত এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করেনি। তবে শরণার্থীদের ফেরানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ভারতের আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত, বাংলাদেশ তা নিয়ে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাওয়ায় স্পষ্টতই ভারতের অবস্থান এখন কিছুটা বদলেছে।

সর্বোপরি গত নভেম্বরে চীনের সমর্থনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সমঝোতায় সই করে ফেলার পর থেকেই ভারত যাবতীয় দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে রোহিঙ্গা সংকটে এখন অনেক বেশি প্রোঅ্যাকটিভ ভূমিকা নিতে চাইছে। মোদি-সু চি’র বৈঠকে তারই প্রতিফলন ঘটবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

এমনিতে দিল্লির সঙ্গে সু চি’র সম্পর্কে অনেক ওঠাপড়া আছে। ১৯৪৭ সালে তার বাবা আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর এই শহরই তাকে আশ্রয় দিয়েছিল, একদিন এখানেই তার মা বার্মার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। অক্সফোর্ডে পড়তে যাওয়ার আগে এই দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকেই তিনি স্নাতক হয়েছিলেন। তবে দিল্লির প্রতি একটা সফট কর্নার থাকলেও মিয়ানমারে সামরিক জান্তার আমলে সু চি বিরোধী নেত্রী হিসেবে যখন বছরের পর বছর গৃহবন্দি ছিলেন, তখন জান্তা প্রতি ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের জন্য তিনি দিল্লির সমালোচনাও করেছেন প্রকাশ্যেই। পরে তার দল নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বিদেশ সফরে তিনি দিল্লিতে নন, গিয়েছিলেন বেজিংয়ে।

এই পটভূমিতেই মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যে আবার দেখা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ও সু চি’র। ইতোমধ্যে ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে মাত্র কয়েকদিন আগেই তার ভারতীয় কাউন্টারপার্ট সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন রাখাইনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত পূর্ণ সমর্থন দেবে, এমনকি সেখানে তারা বাড়িঘরও বানিয়ে দিচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে মোদি-সু চি বৈঠকের পর রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারিত না-হওয়ায় যে পরিমাণ সমালোচনা হয়েছিল ভারত, এবার আর সেই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। তাই কোনও না কোনোভাবে রাখাইনের বাস্তুচ্যুতদের সমস্যার কথা দিল্লির বৈঠকে আসবে, এটা একরকম নিশ্চিত।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution