শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

ব্যাংক ঋণে সুদের হার আবারও ফিরলো দুই অঙ্কে

অর্থনৈতিক ডেস্ক:: বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাংক ঋণে সুদের হারও বাড়ছে। ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোনও কোনও ব্যাংক ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে। যদিও কয়েক মাস আগে ঋণ বিতরণ করে এক অঙ্কে সুদ পেয়েছে ব্যাংকগুলো। বেশি সুদের লোভে কোনও কোনও ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়েও বেশি পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে। এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তারল্য সংকট। এমন অবস্থায় সুদের হার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করছে কিছু ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও ব্যাংকগুলোর নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ঋণে সুদের হার আবারও চলে গেছে দুই অঙ্কে। এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে।’

বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বাড়লে ব্যবসায় খরচ বেড়ে যায়। ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০টির বেশি ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে দুই অঙ্কে সুদ নিচ্ছে ৩০টির বেশি ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘দুই মাস আগেও ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ প্রস্তাব দিতো। কিন্তু এখন সেই সুদের হার চলে গেছে দুই অঙ্কে। এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় ঋণে সুদের হারও বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। অক্টোবরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, আগস্টে ১৯ দশমিক ৮৪ ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জুনে ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘গত কয়েক মাস সুদের হার কমলেও দীর্ঘমেয়াদী ঋণে সুদের হার দুই অঙ্কেই ছিল। এখন স্বল্পমেয়াদী ঋণেও সুদের হার বাড়ছে। সুদের হার বাড়লে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়।’

ইএবি সভাপতি উল্লেখ করেন, ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য সুদহার কমার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করা জরুরি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতও প্রয়োজনীয়। তার অভিযোগ, এগুলোর কোনও সুবিধাই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

স্বাধীনতার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সুদের হার এক অঙ্কে নেমে যায়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এই সুদের হার সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। এর আগে সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে। ওই সময়ে ব্যাংকগুলো গড়ে ১০. ৩৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংক ঋণে সুদহার প্রথম ১১ শতাংশের নিচে নেমে আসে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে। তখন সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এরপর ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে ১৩ শতাংশের ওপরে ওঠে। ১৯৮৩ সালে তা দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এরপর ১৯৯২ সালের জুনে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা সুদের হার কমানোর দাবি জানাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে ব্যাংকগুলো নিজেরা বসে ঋণ ও আমানতে সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এরপর থেকে ঋণের সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে গড় সুদহার ১২ শতাংশের ঘরে নেমে আসে। ২০১৩ সালে নেমে আসে ১১ শতাংশে। ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তা ১০ শতাংশের ঘরে ছিল। নভেম্বরে প্রথমবারের মতো সেটি নেমে আসে এক অঙ্কে অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com