মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৬ অপরাহ্ন

বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে গণগ্রেফতার আতঙ্ক

ই-কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রায় ঘোষণার দিন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হতে পারে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দলের মধ্যে। এ কারণে নেতাকর্মীদের অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছেন। সাময়িক সময়ের জন্য ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন অনেকেই। দলের শীর্ষ মহল থেকেও নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা’র রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন বিশেষ আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে খালেদা জিয়ার তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে বলে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন। সম্ভাব্য শাস্তির আশঙ্কা থেকে রায়ের ওই দিনক্ষণ নির্ধারণের পর থেকেই দলের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন। এটিকে ‘সাজানো মামলা’ এবং এর রায় আগে থেকে নির্ধারিত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে আসছেন তারা। তবে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সত্ত্বেও দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রায়ে সাজা ঘোষণা করা হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও আলাদা বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করছেন তারা। তবে ওই দিনকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ধরপাকড় শুরু হতে পারে বলে মনে করছে দলীয় হাই কমান্ড।

এই রায় ঘোষণার আগে খালেদা জিয়ার জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি হাজিরা রয়েছে। ওই হাজিরার দিনগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে দলের শীর্ষ মহলে। এই গ্রেফতারের ধারাবাহিকতা ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতে পারে বলেও অনেকের ধারণা।

খালেদা জিয়ার মামলায় হাজিরাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল। এ কারণে বিগত হাজিরাগুলোর প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ৩০ জনের মতো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এখনও তাদের অন্তত ৬০০ জন কারাগারে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতার হলে নিম্ন আদালত থেকে নেতাকর্মীদের জামিন পেতে বেগ পেতেও হচ্ছে। জামিন পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অন্য মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখিয়ে আবারও কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এ প্রবণতা আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, রায় ঘোষণার দিনটিকে টার্গেট করে ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরী বিএনপির সর্বপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে বৈঠক করে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঠে নামানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে এক জায়গায় অধিক সংখ্যক নেতাকর্মীর জড় হয়ে বৈঠক ও আলোচনা এড়িয়ে চলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠককেই প্রাধান্য দিয়ে প্রস্তুতি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

দলীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার দিন ‘শত প্রতিকূল অবস্থা’ মোকাবেলা করে হলেও নেতাকর্মীদের কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে নামিয়ে সর্বোচ্চ শোডাউন করার নির্দেশনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম ‘হটকারিতা’ না দেখিয়ে সতর্কতার সঙ্গে ও পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করতেও বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকে সরকার খালেদা জিয়ার মামলার বিচারকাজ সপ্তাহে তিন দিন করে টেনে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার চেষ্টা করছে। এর পরও বিএনপি মনে করে, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ আর তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই রায় দেবেন আদালত। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো রায় হলে বিএনপি তা মানবে না। সে ক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা রাজপথে সক্রিয় থেকে রাজনৈতিকভাবেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার ভয়ে ভীত হয়ে ইতিমধ্যে সারাদেশে যুবদলসহ সর্বপর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে। তবে এ সবকিছুতে নেতাকর্মীরা অভ্যস্ত। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা রাজপথে অবস্থান নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান বলেছেন, গ্রেফতারের আশঙ্কা থাকলেও ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ম্ফূর্ততা কাজ করছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন মামলা কিংবা গ্রেফতারকে ভয় পান না। তা ছাড়া দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি নেতাকর্মীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা রয়েছে। তাই সরকার গ্রেফতার অভিযান চালালে সেটি ‘হিতে বিপরীত’ হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution