সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন

বাংলা ব্লকেডের মিছিল নিয়ে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, তীব্র যানজট

শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজারো শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‌বাংলা ব্লকেডের মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজারো শিক্ষার্থী।

রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে এ সময় সায়েন্সল্যাব, মিরপুর সড়ক, মতিঝিলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় শাহবাগ মোড় এলাকায়।

এর আগে, দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে শুরু হয়ে মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শনিবার (৬ জুলাই) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, রোববার বিকেল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হবে। শুধু শাহবাগ মোড় নয় ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা জেলায়–জেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আগামী শুক্রবার অনলাইনে-অফলাইনে জনসংযোগ হবে।শনিবার বিকেল ৩টায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে মিছিল করা হবে। আগামী রোববার সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালিত হবে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলের পর রোববারের মাঠের কর্মসূচি ঘোষিত হবে।

জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ৫ জুন সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।

সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের দাবি মূলত তিনটি ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটা পুনর্বণ্টন বা সংস্কার; চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার অভিযোগ করেন।

ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com