মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন

নবাবগঞ্জ পাওয়ারপ্যাক প্রকল্পের সিভিল ওয়ার্কে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় নির্মানাধীন ১৩২/৩৩ কেভি, এআইএস গ্রিড সাব-স্টেশন পাওয়ারপ্যাক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাঠামো নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহন, জমিতে মাটি ভরাট, প্রকল্পের ভবন নির্মান, বাউন্ডারী দেয়াল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফ্লোর নির্মান ও টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটির নিচ থেকে বেজমেন্ট কলাম নির্মাণ সহ প্রতিটি সেক্টরেই শিডিউলের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিম্নমানের উপাদান সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নবাবগঞ্জের ৫ একর জমিতে নির্মান হচ্ছে ১৩২/৩৩ কেভি-এআইএস গ্রিড সাব-স্টেশন বিদ্যুৎ পাওয়ারপ্যাক প্রকল্প। প্রকল্পটির সিভিল ওয়ার্ক বা অবকাঠামোগত কাজের জন্য ব্যয় বরাদ্দ নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। পাওয়ারপ্যাকের কাঠামোগত নির্মান কাজ মার্চ ২০১৭ সালে শুরু করে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কাজটি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের গতি ঠিকঠাক মতো চললেও কাজের গুনগত মানে চলছে অর্থ হরিলুটের মহোৎসব। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সিডিউলের প্রথম ধাপেই রয়েছে জমি অধিগ্রহন কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে সিডিউল মোতাবেক ৫ একর জমি অধিগ্রহনের কাগজপত্র তৈরি করে ঠিকাদার কোম্পানী। ২য় ধাপে ঐ জমিতে পাশ্ববর্তী রাস্তার সমান্তরাল করে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারী দেয়াল নির্মানের কাজ করা হয়। এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড মাটি ভরাটের জন্য সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় চৈতি এন্টারপ্রাইজকে।

সূত্র জানায়, চৈতি এন্টারপ্রাইজ ড্রেজিং করে যে বালু দ্বারা ঐ জমি ভরাট করেছে তার চাইতে দেড়গুন বেশী বিল বাউচার করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। আর ঐ বিলের একটা বৃহৎ অংশ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেটে রেখেছে। কি পরিমান বা কত ঘটফুট বালু বা মাটি দ্বারা জমিটি ভরাট করতে হবে সিডিউলে এমনটা উল্লেখ না থাকার কারনেই এই রকম দুর্নীতির অবাধ হয়েছে। কারন বালু ভরাট করা হয়েছে ১শ ফুট আর কাগজপত্রে দেখানো হয়েছে দেডশ ফুট। এখানে চুরি ধরার কোন সুযোগ নেই। আর চুরি ধরতে হলে প্রকল্পের সমস্ত বালু আবার পুনরায় উত্তোলন করে পরিমাপ করতে হবে। এটা আদৌ সম্ভব নয়।  সিডিউলে দুই নাম্বার ইটের ব্যবহার সম্পন্ন নিষিদ্ধ থাকলেও বাউন্ডারী দেয়াল নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে দুই নাম্বার ইট। একভাগ এক নাম্বার ইটের সাথে দুই ভাগ ২ নাম্বার ইট মিক্সড করে দেয়াল গাথুনী করা হয়েছে এবং দেয়ালে আস্তর করা হয়েছে বিডি বালুর মিশ্রন দ্বারা। মোটা দানার আস্তর বালুর দাম বিডি বালুর চাইতে দিগুন বেশী। একারনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আস্তর করার সময় বিডি বালু ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া সিমেন্টের পরিমান দেয়া হয়েছে খুবই সামান্য। ৬ অনুপাত ১ অনুসারে সিমেন্ট ব্যবহারের বিধান থাকলেও সিমেন্টের ব্যবহার দেয়া হয়েছে ১০ অনুপাত ১। অর্থাৎ ১০ বস্তা বালুর সাথে ১ বস্তা সিমেন্টে। একারনে আস্তর করা বালুর জমাটবাধা টুকরা হাতে নিয়ে চাপ দিলে সাথে সাথে গুড়া হয়ে যায়। প্রকল্পের বাউন্ডারী দেয়ালটি খুবই ঝুকিপূর্ন। অল্প দিনের মধ্যে ধসে পড়ার সম্ভরনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

প্রকল্পের ব্যবহারিক কাজে ছোট বড় সব মিলিয়ে ভবন নির্মান করা হয়েছে ৪ টি। ভবনগুলো দেখলেই মনে হয় রোগাক্রান্ত। সুত্র জানায়, দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে ২ নাম্বার ইট। সিডিউলের বাইরে গিয়ে ছাদ ঢালাইয়ের কাজে সিলিকেট বালুর সাথে আস্তর বালুর মিশ্রন ও পাথর কনার সাথে ২ নাম্বার ইটের খোসা ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সাথে সিমেন্টের পরিমান দেয়া হয়েছে কম। আর ভবনের বৈদ্যুতিক কাজে সুইচ বোর্ড ও ওয়ারিং কেবল ব্যবহার করা হয়েছে খুবই নিম্নমানের।

সূত্র জানায়, সিভিল ওয়ার্কের প্রতিটি কাজেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সিডিউলে দেয়া আছে বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের কেবল, সুইচ বোর্ড, লাইট ইত্যাদি দ্বারা ভবনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন ভাল মানের শক্ত আকৃতির তার বা কেবল। কিন্তু ভবনের বেশীর ভাগ তার বা কেবলই খুব নরম প্রকৃতির। নরম প্রকৃতির তার বা কেবল খুবই নিম্নমানের এবং দামেও সস্তা। বিদ্যুতের টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটির নিচে থেকে রড দ্বারা আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে বেজ কলাম বসানো হয়েছে। কিন্তু বেজ কলাম গুলোতে রডের পরিমান কম দেওয়া হয়েছে এবং পাথরের সাথে ইটের খোসা ও সিলিকেট বালুর সাথে বিডি বালু মিক্সড করে ঢালাই দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের মুল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড প্রকল্পের সিভিল ওয়ার্ককে কয়েকটি ধাপে ভাগ করে নিজেদের মন মতো সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যক্রমকে চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের সুবিধা হচ্ছে সাব-ঠিকাদারদের মুখ বন্ধ করে বিল ভাউচার গুলো সরকারী ফান্ডে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে। কোন প্রকার টেন্ডা বিজ্ঞাপন ছাড়াই চৈতি এন্টারপ্রাইজকে পাথর ও বালু, হৃদয় এন্টারপ্রাইজকে কন্সট্রাকশন লেভার ও উর্মি এন্টারপ্রাইজকে সিভিল ওয়ার্কের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। এই সাব-ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অতি কাছের লোক হওয়ায় কাজ পেতে তাদের কোন সমস্যা হয়নি। আর কোম্পানীরও ধাপে ধাপে দুর্নীতি করার অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এব্যাপারে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সাব-এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পে ২ নাম্বার ইট ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই। কিন্তু মূল ডিজাইনের বাইরে কিছু কিছু কাজ থাকে। সেখানে কিছু পরিমাণে ২ নাম্বার ইট ব্যবহার করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution