সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

দালালদের দৌরাত্ম ও কর্মকর্তাদের অনিয়ম সরকারের অর্জন ম্লান

বিশেষ প্রতিনিধি॥ ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ “এক অবস্থানে সেবা” কাগজে কলমে এই রকম প্রচার ও প্রচারণা চালালেও গ্রাহক সেবা ও দালালদের দৌরাত্ম যেন পিছু ছাড়ছে না। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে এই অঞ্চলে বিদ্যুত খাতে বর্তমান সরকারের অর্জন যেন প্রতিনিয়ত ম্লান হচ্ছে। এমনি অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে দিনের পর দিন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সামান্য ঝড় ও বাতাস প্রবাহিত হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তখন গ্রাহকদের। নির্দিষ্ট টাকার বাইরেও দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নতুন সংযোগ নিতে হয় বলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আছে। পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেও স্বজনপ্রীতি অনিয়ম অভিযোগের অন্ত নেই। স্বজনদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেরাও ফায়দা লুটছেন।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, নবাবগঞ্জ, দোহার, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, হরিরামপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের আংশিক এলাকার প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার গ্রাহক নিয়ে চলছে নবাবগঞ্জে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কার্যক্রম। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিদ্যুৎ গ্রাহক ও নতুন সংযোগ নিতে আসা সাধারণ মানুষকে প্রতিপদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অধিকাংশ সময় ১ জন মহিলা কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ অফিসে বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করেন। ফলে কলেজ ও স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, খেটে খাওয়া কৃষি শ্রমিকদের বিল দিতে আসলে ভোগান্তিতে পরতে হয়। বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। দালালদের দৌরাত্ম বৃদ্ধির কারনে সাধরণ জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। শিল্প, বানিজ্য ও সেচ প্রকল্পের গ্রাহকদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। যা দেখেও না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় গ্রাহকদের দাবি, গত বছর জুন, জুলাই ও আগষ্ট মাসে অধিকাংশ গ্রাহকের হঠাৎ করে ভুঁতরে বিলের কপি পাঠায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। এর ফলে সাধারণ কৃষক ও শ্রমজীবী গ্রাহকের ভোগান্তি যেন চরমে পৌছায়। অনেকেই সময় মতো দ্বিগুন বিল পরিশোধ করতে না পারায় তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কোন গ্রাহক অফিসে যোগাযোগ করলে সফটওয়্যারের সমস্যা আছে বলে জানিয়ে কর্তব্য শেষ করেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও অভিযোগ: দোহার নবাবগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬টি অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। সেবার মানের কোনো বালাই নেই। রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে ফোন দিলেও রিসিভ করেন না অভিযোগ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। গাছ কাটা ও লাইন মেরামতের কথা বলে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। সদরের অভিযোগ কেন্দ্রটিতে কেউ ফোন করলে তারা কর্ণপাত করেন না। কল রিসিভ করেই অভিযোগের কথা শুনলে সংযোগ কেটে দেয়। এরপর ওই নম্বরটি আর রিসিভ করেন না।

জানা গেছে, বিল কপি পৌছানো নিয়েও রয়েছে গাফলতি আর অনিয়ম। কাশিমপুরের মারুফ হোসেনের বাসার নভেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিল পৌছে পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের মাত্র ৩তিন আগে। যদিও প্রায় ১৫ দিন পূর্বে রিডিং নেয়া হয়। এভাবে অল্প সময় হাতে রেখে বিল পৌছে দিয়ে পরে জরিমানা আদায় করছে ঢাকা পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২। এটাও গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একটি কৌশল বলে জানা গেছে।

বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে অনিয়ম: বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের সাথে নানা প্রতারণা করে আসছে বলেও অভিযোগ আছে। নবাবগঞ্জের গোবিন্দপুরের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি একজনের নিকট থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে নেন। তার নিজ নামে মিটার পরিবর্তন করতে গেলে নানা টালবাহানা করে। দীর্ঘদিন হয়রানির পর টাকার বিনিময়ে পরে কাজটি করা হয়। নানা কৌশলে এভাবে গ্রাহকের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী। কিন্তু অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার নেই।

নবাবগঞ্জের বাহ্রা ইউপির কাহুর গ্রামের বাসিন্দা প্রেস শ্রমিক নুরুল ইসলাম খাঁন অভিযোগ করেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাসে গড় বিল আসতো ২শ ৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকা। কিন্তু হঠাৎ জুলাই ও আগষ্ট ১১৮০ ও ১১২০ টাকার ভুঁতরে বিল আসে তার নামে। চলতি মাসেও তার বিল অতিরিক্ত করে থাকে। পল্লী বিদ্যুতের জিএম’র কাছে বলেও প্রতিকার পায়নি ওই গ্রাহক। মিটার রিডাররা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের বাসায় না গিয়ে অনুমান বিল করে থাকেন। ফলে পূর্বের বিলের সাথে কোন মিল থাকে না। যেখানে সরকার চাচ্ছে আগামী ২০২১ সালে মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে। সেখানে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি না থাকলেও গাছ কাটা, লাইন সংস্কার ও খুটি সরানোর নামে প্রতিনিয়তই ঘন্টার পার ঘন্টা বিদ্যুত থাকছে না। এতে দোহার নবাবগঞ্জে লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুত বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা সদর থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের অবস্থা আরো ভয়াবহ। অনেক এলাকায় সারাদিনই বিদ্যুতবিহীন থাকতে হয়।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (বর্তমান দায়িত্বে) আলমগীর হোসেন বলেন, জিএম স্যার নেই। তিনি দেশের বাইরে আছেন। দালালদের বিষয়টি আমার জানা নেই। কোন কর্মকর্তা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2020  E-Kantha24
Technical Helped by Titans It Solution