বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন

দাবার বোর্ডেই চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তি জিয়াউর রহমান

দাবাড়ু জিয়াউর রহমান

স্পোর্টস রিপোর্টার॥ জিয়াউর রহমানের দাবাই ছিল সবকিছু। জীবনের শেষ মুহূর্তটাও জিয়া কাটালো দাবায়। খেলার মধ্যে ক্রীড়াবিদদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তবে বাংলাদেশে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতার অর্জন করেছিলেন ২০০২ সালে। ১৯৭৪ সালে তার জন্ম হয়েছিল দাবা পরিবারেই। বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের দাবাড়ু। স্ত্রী তাসমিন সুলতানাও ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়।

জিয়া-তাসমিন দম্পতির একমাত্র সন্তান তাহসিন তাজওয়ার জিয়াও দাবা খেলেন। তিনি এখন ফিদে মাস্টার। বাবা-পুত্র একসঙ্গেই খেলছিলেন চলমান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। জিয়াউর রহমান প্রিয় খেলাটি খেলতে খেলতেই পরপারে পাড়ি জমালেন। বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে যে পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার, তাদেরই একজন তিনি। খ্যাতিমান এই দাবাড়ু শুক্রবার (৫ জুলাই) জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বাদশ রাউন্ডের খেলা চলাকালে অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন (ভেন্যু পল্টনে অবস্থিত বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের পুরনো ভবন)। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি এই কীর্তিমান দাবাড়ুকে (ইন্না লিল্লাহি … রাজেউন)। শুক্রবার খেলার সময় জিয়ার প্রতিপক্ষ ছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি আর শেষ করতে পারেননি জিয়া। যদিও খেলায় ভালো অবস্থানেই ছিলেন তিনি। বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে হঠাৎই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এতে অন্য খেলোয়াড়রা হতভম্ব হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই জিয়াকে শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দাবা ফেডারেশন থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন ৫০ বছর বয়সী জিয়া! ধারণা করা হচ্ছে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তার।

উল্লেখ্য, ৪৮তম জাতীয় দাবার একাদশ রাউন্ড শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আনসারের গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান এককভাবে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। শুক্রবার যার সঙ্গে খেলছিলেন, গতবারের চ্যাম্পিয়ন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব সাড়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে ছিলেন তৃতীয় স্থানে। জিয়ার ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও এবারের জাতীয় দাবা লিগে খেলছেন। শুক্রবার জিয়ার স্ত্রী লাবণ্যও ছিলেন ফেডারেশনে। স্ত্রী ও সন্তানের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় দাবাসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

জিয়ার অকালমৃত্যুতে দাবাসহ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে প্রগাঢ় শোকের ছায়া। জিয়ার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদও ছিলেন দাবাড়ু। ছেলে তাহসিনও একই পথে হেঁটে হয়েছেন ফিদেমাস্টার। জিয়া হয়তো চেয়েছিলেন আরও অনেক সাফল্য কুড়িয়ে তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে দাবা খেলা থেকে অবসর নেওয়ার। জিয়া বাংলাদেশী দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিদে রেটিং অর্জন করেছিলেন (২৫৭০, অক্টোবর ২০০৫)। তিনি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তিনি ১৯৯৩ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার (তার আগে ১৯৮৭ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন নিয়াজ মোরশেদ, যিনি উপমহাদেশেরই প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার)। জিয়ার খেলার ধরন ছিল শক্ত অবস্থানগত। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এই আসরে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি (যেখানে বাকি চার গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মিলিতভাবে জিতেছেন ১৬ বার)।

১৯৭৪ সালের ১ মে জন্ম নেয়া জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com