সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
মো.সাদের হোসেন বুলু,দোহার নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ
বাংলাদেশের সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা-১) ১৭৪ নং সংসদীয় আসনটি সারাদেশের গণমানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি অঞ্চল। যার ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাধারন মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। কারন রাজধানীর নিকটবর্তী এই আসনটিতে বরাবরের মতো এবারো মনোনয়ন দৌড় ও নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে তৎপর, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা। জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ও দলীয় পদ ধরে রাখতে এ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়াটা গুরুত্বের সাথে দেখছেন প্রত্যেক প্রার্থী।
দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ভোটার দের কাছে থেকে শোনা যায়, এ আসনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার গঠন করে থাকে এমন কথা মানুষের মধ্যে প্রচলন আছে বহুদিন। ২০০৮ সালের সীমানা পুনর্বিন্যাসে পর থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় (ঢাকা-১) আসন। এর আগের নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ পৃথক আসনে নির্বাচন হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পটপরিবর্তনে আবারো তা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খাঁন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী সাবেক বিমান ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মান্নানকে পরাজিত করেন। কিন্তু স্বজন প্রীতি, দূর্ব্যবহার ও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা এবং দলের মধ্যে নিজস্ব বলয় তৈরী করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরীর বিভিন্ন অভিযোগে খুব অল্প সময়ে অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খাঁনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পরবর্তী ২০১৪ সালের নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামীলীগ মনোনিত মহাজোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও, এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের কাছে পরাজিত হন। আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার রয়েছে তার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দূর্ব্যাবহার তার কাল হয়ে দাঁড়ায় । এই অঞ্চলে নির্বচনী ইতিহাস থেকে জানা যায়, গত ৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১, দোহার থেকে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও ঢাকা-২, নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান টানা তিন বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির থেকে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন । ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে সমর্থন দেয়। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী মান্নান খান তার ব্যক্তিগত পরাজিত হন।
এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-১ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বশীলতার সাথে কর্তব্য পালন করে আসছেন। এলাকায় তার জনপ্রিয়তাও পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে ওঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত বিএনপি। অপর দিকে জাতীয় পার্টিও আসনটি হাতছাড়া করতে চায় না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দুইজন, আওয়ামী লীগের তিনজন ও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন।
বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক। অপর দিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ ও সাবেক বাংলাদেশ আইনজীবী লীগের সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট আইনজীবী নূরে আলম উজ্জল। বিএনপি থেকে একাধিকবার নির্বাচিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করায় দোহার-নবাবগঞ্জ আসনে আগামী নির্বাচনে তার চাচা সালমান এফ রহমানকে সমর্থনের ঘোষণা দেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে জানা যায়। তিনি ঢাকা গুলশান থেকে নির্বাচন করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। অপর দিকে দেশ বরেন্য শিল্পপতি যমুনা গ্রুপেরচেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ও সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার ভোটাদের সাথে যোগাযোগ অক্ষুণœ রেখে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদিচ্ছেন। নিয়িমিত গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থীরা মাঠের রাজনীতিতে মনোনিবেশ করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান, খন্দকার আবু আশফাক। আর আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোটেক আবদুল মান্নান খান ও সালমান এফ রহমান ও নূরে আলম উজ্জল বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলায়। অপর প্রার্থী পনিরুজ্জামান তরুণের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার কোমরগঞ্জ। অন্য দিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দুইজনেরই বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়। ভোটের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার প্রবণতাও রয়েছে এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান মুঠোফোনে বলেন,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, দল মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবধ্য হয়ে জন্য আমরা ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সভা করছি।
ঢাকা-১ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহায়তায় আমি এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে দোহারের পদ্মার ভাঙ্গনরোধ, বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক সংস্কার,তৈরী,নদীতে ব্রিজ,কালভার্ট নির্মাণেও ভূমিকা রেখেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণে আমার ভূমিকা কতটুকু তা এই অঞ্চলের মানুষ বলবে। আমি আগামীতেও এই এলাকার অগ্রযাত্রায় শরীক চাই এজন্য সকল শ্রেণীর ও পেশার মানুষের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করি।