শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
জয় মহন্ত অলক, ঠাকুরগাঁও থেকে:: ঠাকুরগাঁওয়ের ইউনিয়নে ইউনিয়নে চলছে ঐতিহ্যবাহী ধামের গান। এমন আয়োজনকে ঘিরে জেলার গ্রামাঞ্চলে উৎসবের আমেজ চলছে। আত্মীয়-স্বজনদের পদচারণায় মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। কোথাও খোলা আকাশের নিচে, আরাব কোথাও শামিয়ানা টানিয়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ ধামের গান অনুাষ্ঠিত হচ্ছে। তবে দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহের কোন কমতি নেই।
প্রতি বছর কার্তিক মাসে লক্ষ্মীপূজার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জেলায় লক্ষ্মীধামের গানের আসর আয়োজন করে থাকে। এ বছরেও শুরু হয়েছে ধামের গানের আসর। হিন্দু মুসলমানসহ সকল ধর্মের নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধ একই কাতারে বসে নাওয়া-খাওয়া ভুলে এসব গান উপভোগ করে থাকে। জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় শতাধিক ধামের আসর শুরু হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদরের আকাচা, রহিমানপুর, রায়পুর, মোহাম্মদপুর, আখানগরসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে ধামের গান ও অভিনয় দেখতে সব বয়সীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আঞ্চলিক ভাষায় কাল্পনিক চরিত্রগুলো রচনা করা হয়। গ্রামে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পালা তৈরি করা হয়। আবার কখনও যাত্রা পালার বই থেকে পালা গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়া হয়। ধামের গানে লোকনাট্য আঙ্গিকের পুরুষকেন্দ্রিক গান ও অভিনয় পরিবেশিত হলেও গ্রাম বাংলায় এর সমাদরের কমতি নেই। ধামের গান শুরু হওয়ার কথা শুনলেই ওই অঞ্চলের মানুষের মনেপ্রাণে-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ধামের গানের মজার ব্যাপার হলো- নাটকের বিভিন্ন নারী চরিত্রে পুরুষরাই মহিলাদের কাপড় পরে লম্বা চুলের ঝুঁটি, মাথায় খোঁপা, নাকে নাকফুল, কানে দুল পরে অভিনয় পরিবেশন করে। তাদের চেনা দায় হয়ে পড়ে। ধামের গানে পুরুষ চরিত্রটি যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি। দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য ছেলেরা মেয়ের পোশাক পড়ে অভিনয় করে। তবে এবার নারীদেরও কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
ধামের গান দেখতে আসা স্থানীয়রা জানান, তারা প্রতিবছরই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এটি একটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সেখানে হিন্দু-মুসলিম সহ সকল ধর্মের মানুষ একসাথে এই আনন্দ উপভোগ করেন। এবারও ঠিক সেটাই হয়েছে কোন কমতি নেই সেখানে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন।
ধামের গানের শিল্পীরা জানান প্রতিবছরেই লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে তারা এই গানে অংশগ্রহণ করেন। দুঃখ কষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে ফুটিয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে আনন্দ বিনোদন দেয়ায় তাদের কাজ সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্যই তাদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। সামাজিক ভাবে এই অনুষ্ঠানগুলো করা। যাতে সমাজের কাছে তারা ভালো কিছু তুলে ধরতে পারেন। তবে তারা আরো বলেন আস্তে আস্তে এই ধামের গান ও যাত্রাপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু এটাই তাদের সংসারের একমাত্র আয়। তারা চান ধামের গান ও সামাজিক যাত্রাপালা যেন বিলীন না হয়ে যায়। সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এই শিল্পীরা। সেই সাথে সরকার যেন তাদের দিকে একটু সুনজর দেন।
ধামের গানের আয়োজক কমিটির সভাপতি শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন লক্ষ্মীর ধাম একটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এটি দীর্ঘদিন থেকে হয়ে আসছে এই ধামের গানটি নিজেদের গ্রামের উদ্যোগে হচ্ছে। সরকারিভাবে তারা তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা পান না। সুযোগ-সুবিধা পেলে হয়তোবা দুদিনের অনুষ্ঠান চার দিনব্যাপী চালানো সম্ভব।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, ধামের গানের সংস্কৃতির সঙ্গে যারা জড়িত তারা সরকারি কোন রেজিস্টার সংগঠন নয়। যে কারণে তাদেরকে মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতা করার যে সুযোগ থাকে সেটি আসলে পাওয়া যায় না। তিনি চেষ্টা করবেন যে সমস্ত সংগঠনগুলোর ধামের গানের আয়োজন করে থাকে তাদেরকে একটি রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসতে তাহলে সুযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব। এছাড়া সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই গানের বা আয়োজনের সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।