শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: আজ ৩ নভেম্বর (রোববার) জেল হত্যা দিবস। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান কারাগারের অভ্যন্তরে বিনা বিচারে ও বর্বরোচিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে হত্যার কিছুদিন পরই ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাসের বর্বর এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোদ্ধা জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন। ওইদিন তাদের জেলখানার অভ্যন্তরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে এ জাতীয় চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে এ সরকার গঠিত হয় ও শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান। এ সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেস্বর বিজয় অর্জিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, স্বাধীনতার জন্য সব আন্দোলন-সংগ্রামেও এ চার নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এদিকে, জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনসহ তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
তিনি আজ ৩ নভেম্বর ওসব দাবি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন। শুক্রবার ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সোহেল।
তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ৩ নভেম্বর কলঙ্কময় জেলহত্যা দিবস। দেখতে দেখতে ৪৯ বছর পার হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত জাতির চার বীর যাদের নেতৃত্বে সফলভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হলো, যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেলাম-আজ অবধি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এরপর নিজের তিনটি দাবি তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো:
১. যেহেতু ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে। তাই এ দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
৩. জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পোস্টে সোহেল তাজ লেখেন, ‘আমি মনে করি, আমার এ তিন দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক এবং এটা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবার প্রাণের দাবি। সেই লক্ষ্যে আমার পরবর্তী কর্মসূচি, আগামী ৩ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আমি অবস্থান নেব এবং পরবর্তীতে পদযাত্রা করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেব।’
তিনি আরও লিখেন, ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার উদ্দেশ্যে হেটে যাত্রা শুরু করব। এ সমাবেশে স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের-বৈষম্যবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে অংশ নেওয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’