সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন

ছাত্রলীগ নেত্রীর পেটানো ছাত্রী আ.লীগ পরিবারেরই

ই-কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের কার্যালয় ঘেরাওয়ের দিন ছাত্রলীগ নেত্রীর মারধরের শিকার মেয়েটি আওয়ামী লীগ পরিবারেরই সদস্য। হামলার শিকার শ্রবনা শফিক দীপ্তির দাদা আওয়ামী লীগের পাঁচ বারের সংসদ সদস্য। তার চাচা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস।

দীপ্তি জানিয়েছেন, তিনি কোনো বাম সংগঠন করেন না। কিন্তু সেদিন তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ১৫ জানুয়ারি কর্মসূচিতে মেয়েদের হয়রানির প্রতিবাদে।

গত ২৩ জানুয়ারি নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যাপানে বামপন্থীদের উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের দিন বিকালে ‍তুলকালাম কাণ্ড হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিকালে ছাত্রলীগ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দুই পক্ষে প্রথমে হাতাহাতি এবং পরে রড দিয়ে বেদম পিটুনি দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে ‘উদ্ধার’ করতে ছাত্রলীগের যে মিছিল এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিল নারী কর্মীরাও।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়র কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় তিনি একজন মেয়েকে মারধর করেছেন। দীপ্তির এই ছবিটা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে মিডিয়াতে।

দীপ্তি বলেন, ‘তাকে (শ্রাবণী) জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি আমাকে কেন মারছ।’ ‘আমাকে বলেছে তুই কেন আন্দোলন করতে আসলি, আন্দোলন করতে আসলে এইভাবে মার খেতে হবে।’

দীপ্তি আরও জানান, তিনি কোনো বাম সংগঠন বা অন্য কোনো দল করেন না। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সেদিন সেখানে গিয়েছিলেন।

রোকেয়া হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘পিতৃতুল্য উপাচার্যের সামনে আমাদের বন্ধুদের রড দিয়ে পেটানো হলো, মেয়েদের নিপীড়ন করল, কিন্তু তিনি আমাদের জন্য কিছুই করলেন না। তাই তার (উপাচার্যের) কাছে আমাদের নতুন করে কিছুই চাওয়ার নেই।’

মাগুরা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, দীপ্তির দাদা আসাদুজ্জামান মাগুরা-২ (শ্রীপুর, শালিখা ও মোহাম্মদপুর থানা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আসাদুজ্জামানের ছেলে অর্থাৎ দীপ্তির চাচা সাইফুজ্জামান শেখর প্রধামন্ত্রীর এপিসের দায়িত্ব পালন করছেন। দীপ্তির মামা খোরশেদ হায়দার টুটুল মাগুরা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাগুরা পৌরসভার বর্তমান মেয়র।

দীপ্তির নানা মৃত আলতাফ হোসেন টানা ৪৫ বছর মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি মাগুরা পৌরসভার মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। এছাড়া দীপ্তির ফুফু কামরুন লায়লা জলি সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।

১৯৯৪ সালে মাগুরা উপনির্বাচনে কারচুপি নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনে প্রথম সারিতেই ছিলেন দীপ্তির বাবা শফিকুজ্জামান বাচ্চু। বর্তমানে বাচ্চু মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে দীপ্তির ওপর হামলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলেও ছাত্রলীগ নেত্রী শ্রাবণী মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি উল্টো অভিযোগ এনেছেন দীপ্তির বিরুদ্ধে।

শ্রাবণী বলেন, ‘আমি কারও জামা ছিঁড়িনি, কারও ওপর হামলাও করেনি। তারাই কয়েকজন মিলে আমাকে মেরেছে, ফলে আমি পেটে প্রচণ্ড রকমের আঘাত পেয়েছি।’ ঘটনার পরদিন শ্রাবণী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ভর্তি হন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com