শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

গাবতলীতে ওসি আল হাসান ও আ’লীগ নেতা তারাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় চার্জসিট দাখিল

আল আমিন মন্ডল, বগুড়া প্রতিনিধি::
বগুড়ার গাবতলীতে বহুল আলোচিত সোনারায় ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা তারাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় আ’লীগ নেতাসহ ৯জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানা ওসি (তদন্ত) নুরুজ্জামান গত ১১ জানুয়ারী বগুড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই চার্জসিট দাখিল করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, গাবতলীর আটবাড়িয়া গ্রামের বুলু প্রাং এর ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৫), লাগড়ার ছেলে শহীদুল (৩০), আয়েজ উদ্দিনের ছেলে ফেরদৌস (৩০), দুলুর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩২), বনিজ আকন্দের ছেলে জহুরুল ইসলাম সান্না (৩৫), চাঁন মিয়ার ছেলে দুলাল (৩২), সাবেকপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত বিলু মাষ্টারের ছেলে আইনুল হক বিদ্যুত (৪৫), বগুড়া সদরের লক্ষীপুর পীরগাছা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মানিক (৩২) এবং বথুয়াবাড়ী গ্রামের ফেরদৌস সরকার ওরফে খাজা ডাক্তারের ছেলে সিহার সরকার তুষার (৩৩)। এদের মধ্যে হেলাল, মানিক ও ফেরদৌস কারাবন্দী থাকলেও পলাতক রয়েছে শহিদুল, সাইফুল, দুলাল ও বিদ্যুত। তবে জামিনে রয়েছে জহুরুল ইসলাম সান্না ও সিহাব সরকার ওরফে তুষার। উল্লেখ্য, গত ২০১৬ইং সালের ৮জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টায় উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের তাঁর নিজ আটবাড়িয়া গ্রামে ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে নিয়ে বাড়িতে এসে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীরা রাত ৩টায় কৌশলে তাঁর ঘরের জানালা খুলে ঘুমন্ত অবস্থায় তারাজুলের মাথায় পরপর ৩টি গুলি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তারাজুলের স্ত্রী আরজুমান্দ বানু শাপলা বাদী হয়ে গতবছরের ২০১৬সালের ১২জুলাই অজ্ঞাতদের নামে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বগুড়ায় তারাজুলের অপারেশন করে গুলি বের করা হলেও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস (লাইফ সাপোট) থাকা অবস্থায় ওই বছরের ২৩জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান।

অপরদিকে, বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার প্রয়াত ওসি আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ আল হাসান (৪৩) আত্মহত্যার প্ররোচনায় দায়েরকৃত মামলায় দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) নুরুজ্জামান প্রায় ১০মাস পর এই চার্জশীটটি দাখিল করেন। চার্জসিটে অভিযুক্তরা হলো প্রয়াত ওসি আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ আল হাসান এর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী রুমানা আক্তার মিতু (২৮) এবং মিতুর পিতা মোকছেদ আলী (৬৬)।
উল্লেখ্য, নাটোর জেলার কদমতলী বড়াই গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ আল হাসান গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারী গাবতলী মডেল থানায় অফিসার্স ইনচার্জ হিসাবে কাজে যোগদান করেন। কর্মদক্ষতার কারণে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তিনি এলাকায় প্রশংসিত হন। তিনি এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার জীবনেও খুব সুখে-শান্তিতে ছিলেন। কিন্তু তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মিতু মাঝে মধ্যেই তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এরই একপর্যায়ে গত বছরের ২৯ মার্চ সকালে ওসি আব্দুল্লাহ আল হাসান থানা অফিসে আসেন। এরপর মোবাইল ফোনে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মিতুর সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে বেলা পৌনে ১১টায় তিনি থানা কোয়ার্টারের বাসায় গিয়ে সেলিং ফ্যানের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে যান। সেখানে তিনি বড় স্ত্রীর উদ্দ্যেশে লিখেছেন ছেলে-মেয়েকে মানুষ করো। আর তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী রুমানা আক্তার মিতুকে। এ ঘটনায় ওসি হাসানের বড় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মিতু ও তার বাবাকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে অভিযুক্তরা জামিনে রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com