শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
এস,আর, সোহেল খুলনা ব্যুরো:: খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেছেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। দেশে ইতিপূর্বে ধর্মের নামে যে কয়টি সহিংস ঘটনা এখানে ঘটেছে, তদন্তে দেখা গেছে তার কোনটিই ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘটেনি বরং ব্যক্তি বিশেষের বিরোধে ধর্মকে ব্যবহারের অপচেষ্টা করা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীরা সঠিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এ ধরণের সহিংসতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার নিউজ নেটওয়ার্ক এর আয়োজনে ও কানাডিয়ান দূতাবাসের সহযোগিতায় গণমাধ্যম কর্মীদের ‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতা’ বিষয়ক তিনদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিন এসব কথা বলেন। নগরীর নিরালাস্থ উন্নয়ন সংস্থা ‘সেইন্ট বাংলাদেশ’ এর সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে নীতিমালা না মেনে অনেকেই অনলাইন পোর্টাল চালু করে দায়িত্বহীনভাবে বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক তথ্য প্রচার করছে। ফলে সমাজে অনেক ক্ষেত্রে বিশৃংখলা দেখা দিচ্ছে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন, নিউজ নেটওয়ার্ক’র সম্পাদক মো. শহিদুজ্জামান। নিউজ নেটওয়ার্ক’র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী সাংবাদিক অধ্যাপক শেখ দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. মামুন অর রশীদ। কর্মশালায় ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা এ্যাড. মো. এনায়েত আলী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রেসক্লাব সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল স্থম্ভ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু সেটি এখন নেই। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে, যদিও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাংবাদিকদের নীতি নৈতিকতার মধ্য থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানান তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো. মামুন অর রশীদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সংবিধান প্রণেতা এ্যাড. মো. এনায়েত আলী বলেন, রাষ্ট্রের চারটি মৌলিক ভিত্তি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানা, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। তিনি বলেন, সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদ’র ৭ নং ধারায় জনগণকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ২ নং অনুচ্ছেদের ৮ থেকে ২৫ নং ধারায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলা হয়েছে। ৩ নং অনুচ্ছেদের ২৬ থেকে ৪৭ নং ধারায় জনগণের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। তবে, ধারা ১২ তে কোনোভাবেই ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না- বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ, ’৭২ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ধর্মের নামে বারবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংবিধানকে ব্যবহার করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে নিউজ নেটওয়ার্ক সম্পাদক মো. শহিদুজ্জামান বলেন, মায়ানমারে মুসলমানদের শুধু গণহত্যাই করা হচ্ছে না, সেখানে ধর্মের প্রতি অবমাননা এবং অসহিষ্ণু আচরণ করা হচ্ছে। সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই মূলত এ ধরণের ঘটনার সূত্রপাত হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় কারণে ভারতে মুসলমানদের গরু খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ধর্মের নামে বিভ্রান্তির কারণে মুসলমানরাও নিগৃহীত হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীসহ খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ২৫ জন সংবাদকর্মী অংশ গ্রহণ করছেন।