মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
খুলনা ব্যুরোঃঃ
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) আরিফ নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে দোকানের নামপত্তন ও রিভিউ বোর্ড পরিচালনার নামে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের অধস্তনদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে নগরীর দৌলতপুর রেল রোড (হাজী মহসিন রোড) বাজারের তিনটি দোকান অনিয়মের মাধ্যমে নামপত্তনের অভিযোগ উঠেছে। মূলত : তার সঙ্গে যোগসাজসে দৌলতপুর এলাকার আব্দুর রেজ্জেক হাওলাদার ও মো. আশরাফ হোসেন কর্তৃক মূল গ্রহিতাদের স্বাক্ষর জালকৃত হস্তান্তরপত্র দাখিলের মাধ্যমে এ অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়।
অপরদিকে, হস্তান্তর সূত্রে দোকানের বর্তমান মালিক এইচ,এম কামরুল ইসলাম জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে নামপত্তন বাতিলের জন্য কেসিসিতে আবেদন করেন। ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে শুনানি হয়। কিন্তু শুনানি চলাকালে রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে অভিযোগকারীর পক্ষে উপস্থিত থাকা কেএম মইনুল আলমের ওপর আক্রমনাত্মক আচরণ করেন এবং তাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি জালিয়াতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কেএম মইনুল আলম বুধবার কেসিসি মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে তিনি ন্যায় বিচার প্রাপ্তি এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসানের অসদাচরণ ও তার বিরুদ্ধে জালিয়াতকারীদের পক্ষাবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নগরীর দৌলতপুরস্থ শরীফ আমজাদ হোসেন রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল আজিজ হাওলাদারের পুত্র এইচ,এম কামরুল ইসলাম ১৯৯৫ সাল থেকে দৌলতপুর রেল রোড বাজারের (হাজী মহসিন রোড) ৬ ও ৭ নং দোকান দু’টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভোগ-দখলে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করায় তারই বড় ভাই আব্দুর রেজ্জেক হাওলাদারকে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচালনার দায়িত দেন। কিন্তু বড় ভাই আব্দুর রেজ্জেক হাওলাদার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসান এবং সম্পত্তি শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজসে উল্লিখিত দোকান তিনটি তার এবং মো. আশরাফ হোসেন নামে সম্প্রতি অবৈধভাবে নামপত্তন করিয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে তারা উল্লিখিত দোকান তিনটির মূল গ্রহিতা মো. গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, আহম্মদ আলী শেখ ও রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে একটি পজেশন হস্তান্তর চুক্তিপত্রের কপি দাখিল করেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তাদের নামে নামপত্তনের শুনানীতে উল্লিখিত দোকান তিনটির মূল গ্রহিতাদের ডাকা হয়নি।
বিষয়টি জানার পর বর্তমান মালিক এইচ,এম কামরুল ইসলাম এ বিষয়ে কেসিসি মেয়র বরাবর গত বছরের ৩০ অক্টোবর লিখিত আপত্তি দাখিল করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেট অফিসার মো. নূরুজ্জামান তালুকদার অভিযুক্তদের শুনানীতে হাজির হওয়ার জন্য একাধিকবার নোটিশ জারি করলেও তারা হাজির হয়নি। বরং তাদেরকে সম্পত্তি শাখার পরিবর্তে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসানের দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে শলা-পরামর্শ করতে দেখা যায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় তার দপ্তরে শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। নোটিশে জালিয়াতির মাধ্যমে নামপত্তনকারী আব্দুর রেজ্জেক হাওলাদার ও মো. আশরাফ হোসেনকে উল্লিখিত দোকান তিনটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে বলা হয়। কিন্তু সিআরও আরিফ নাজমুল হাসান শুরুতেই মূল বিষয় এড়িয়ে জালিয়াতকারীদের পক্ষ নিয়ে
শুনানিতে এইচ,এম কামরুল ইসলামের পক্ষে অংশ নেওয়া তার স্বজন কেএম মইনুল আলমের প্রতি আক্রমনাত্মক আচরণ এবং বিভিন্ন ধরণের অপ্রাসংঙ্গিক প্রশ্ন করতে থাকেন। একের পর এক প্রশ্ন এবং তার উত্তেজনাপূর্ণ আচরণে সেখানে ভীতি ও আতংকিত পরিবেশ তৈরি হয়। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি তাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।
অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএম মইনুল আলম বলেন, শুনানির সময় তিনি বারবার মূল গ্রহিতাদের স্বাক্ষর জালের বিষয়টি উত্থাপনের চেষ্টা করলে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, ‘সেটি আমাদের বিষয়, ওই বিষয়ে আমরা বুঝবো’- ইত্যাদি কথা বলে তিনি বারবার জালিয়াতকারীদের পক্ষে অবস্থান নেন। রাজস্ব কর্মকর্তার এ ধরণের আচরণে তিনি হতভম্ব হয়েছেন। তিনি তাকে কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদান বা কাগজপত্র দেখানোর সুযোগও দেননি। এমনকি স্বাক্ষর জালের বিষয়ে অভিযুক্তদের কাছেও কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি শুনানী থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করেন।
দোকানের মূল গ্রহিতা মো. গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি আব্দুর রেজ্জেক হাওলাদার ও মো. আশরাফ হোসেনের নামে তিনি কোন ধরণের হস্তান্তরপত্রে স্বাক্ষর করেননি। তবে, তার স্বাক্ষর জাল করে তারা কেসিসিতে নামপত্তনের আবেদন করে বলে তিনি শুনেছেন। যে কারণে তিনি স্টেট অফিসারের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করে লিখিত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসান বলেন, তিনি অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।
কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার এ ধরণের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তার ওপরও কর্তৃপক্ষ আছে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আরিফ নাজমুল হাসান ২০১৬ সাল থেকে কেসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত এক মাস আগে তার বদলী আদেশ হলেও তিনি বিশেষ উদ্দেশ্যে রয়ে গেছেন। তবে, আজ বৃহস্পতিবার তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।