শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: কুখ্যাত গোয়ান্তানামো কারাগার আবারও চালু ও তা যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু দিয়ে ভর্তি করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম স্টেট ইউনিয়ন ভাষণে তিনি বলেন, আগে শুধুমাত্র আবারও যুদ্ধক্ষেত্রে দেখার জন্য আমরা বোকার মতো আইএস নেতা বাগদাদীসহ শত শত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিয়েছি। তাই আজ আমি আরেকটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি। আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিসকে দেওয়া এক নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছি।
২০০৮ সালে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনেই কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধের জন্য লিখিত আদেশ দেন। তিনি বলেছিলেন, কারাগারটির স্থাপন, পরিচালনা সবই অসাংবিধানিক। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব এর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ওবামা তা করেননি।
ট্রাম্প আরও বলেন, আমাদের সামরিক আটক নীতি পুনঃপরীক্ষা করার জন্য ও গুয়ান্তানামো বেতে আমাদের কারাগার খোলা রাখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। ট্রাম্প এই ঘোষণা দেওয়ার সময় রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যরা তা স্বাগত জানিয়ে হাততালি দেন।
এর আগে বক্তব্যের শুরুতে আমেরিকান মহত্ত্ব’কে সামনে টেনে আনেন ট্রাম্প। আমেরিকাকে শক্তিশালী নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী এক দেশ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলতে চেয়েছেন স্বপ্ন-সম্ভবনায় বিশ্বের আর কোনও দেশ আমেরিকার মতো নয়। ভাষণে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সময়ের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ধারণার আভাস পাওয়া গেছে।
ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেছেন, ‘সব সময়ের জন্যই যা বাস্তব, গত বছর বিশ্ব তা দেখেছে। বিশ্ব জেনেছে, পৃথিবীর আর কোনও দেশের মানুষ আমেরিকানদের মতো নির্ভীক-সাহসী আর নিজের প্রতি আস্থাশীল নয়। পাহাড় দেখলে সেটায় উঠে পড়তে আমরা দেরি করি না। একটা সীমান্ত দেখলে সেটা পেরিয়ে যেতে ভয় পাই না। যেখানেই আশা, তাকেই আমরা কব্জা করে ফেলি। সুতরাং আমেরিকা শক্তিশালী, কেননা এর জনগণ শক্তিশালী।
গুয়ানতানামো বে কারাগারটি চালু রাখার ব্যাপারে মার্কিন সরকারের অনেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানও দায়ী। কংগ্রেস চাইলে এটি বন্ধ করে দিতে পারে। কংগ্রেস সদস্যরা খুব ভালোভাবেই জানেন, গুয়ানতানামো কারাগার সম্পর্কে কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়। কিন্তু তারা কারাগারটি বন্ধের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী নন বা ত্বরিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাননি।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিটি বন্দী, তাকে আটকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আদালতের কাছে তিনি বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দীরা এ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে বর্বরভাবে বন্দীদের নির্যাতন করা হয়। তাদের নির্দয়ভাবে পিটানো হয়। ঘুমাতে দেওয়া হয় না ঠিকভাবে। মানসিক নির্যাতনও চলে। অতি উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকার এক প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়। যাদের গুয়ানতানামো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, মনে করা হয়, তারা সবাই সন্ত্রাসী, জঙ্গি। তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ধরে আনা হয়েছে। তাদের কোনো আইনি অধিকার নেই। প্রকৃতপক্ষে, মোট বন্দীদের মধ্যে কেবল কিছুসংখ্যক বন্দীকে মার্কিন বাহিনী গ্রেফতার করে।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে প্রতিনিয়ত মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মার্কিন বাহিনী। যার ফলে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মানুষের মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো প্রশ্নের সম্মুখীন। মার্কিন সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা আছেন, যারা স্বীকার করেন গুয়ানতানামো বে কারাগারের কারণে অনেক সময় নতুন করে জঙ্গি, সন্ত্রাসী তৈরি হচ্ছে। তারা অনেক বেশি হিংস্র ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে মার্কিন বাহিনীর ওপর। প্রতিশোধপরায়ণও হয়ে উঠছে অনেকে। ফলে মার্কিনিদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ছে। ফলে কারাগারটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেকে। সিএনএন