বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

কাতার ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারবে?

স্পোর্টস ডেস্ক:: কাতার ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে এই আয়োজন শুধু দেশটির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। উপসাগরীয় অন্যান্য আরব দেশও এই আয়োজনে শামিল হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রতিবেশী একাধিক দেশ হোটেল ও প্রশিক্ষণ সুবিধাদি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত একধাপ এগিয়ে বলেছিল, কিছু ম্যাচ তারাই আয়োজন করে দেবে। কিন্তু গত বছরের জুনেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে ছেদ ঘটায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও বাহরাইন। দেশ তিনটির আপত্তি হলো, কাতার কিছু ইসলামপন্থী গোষ্ঠী ও তাদের চিরশত্রু ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের এই অবনতির প্রেক্ষিতে বিকল্প বা অতিরিক্ত ভেন্যু হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছে যে দেশটি, সেটি হলো ইরান। ২০২২ বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কাতারের সঙ্গে আলোচনাও করছে ইরান। ইতিমধ্যে, সৌদির নেতৃত্বে আরব দেশগুলোর এই অবরোধের প্রভাব লঘু করতে কাতারকে সাহায্য করেছে দেশটি।
ইরানের কিশ ও কেশম দ্বীপ কিন্তু পারস্য উপসাগরেই পড়েছে। বিশ্বকাপ দেখতে আগত দর্শণার্থীদের জন্য এখানে হোটেল আছে প্রচুর। তবে কিছু বিধিনিষেধ এক্ষেত্রে ভক্তদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। কারণ, ইরানের হোটেল ও রিসোর্টে মদ্যপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন কড়াকড়ি আছে।
কাতার যে কীভাবে ২০২০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে, তা নিয়ে এখনও অনেক বিতর্ক আছে। দেশটির নেই কোনো ফুটবল সংস্কৃতি। জলবায়ুও বেশ উত্তপ্ত। তার ওপর ইরানকে যদি কিছু ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা নিয়ে আরও বিতর্ক শুরু হবে। কিন্তু কাতারের বিকল্প খুব একটা নেই।
যদিও ২০২২ সালের মধ্যে এক লাখ কক্ষ সমেত হোটেল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কাতার, ৪৫ হাজার কক্ষ তৈরিতেই হিমশিম খাবে দেশটি। ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিল ২০ লাখ বিদেশী দর্শক। রাশিয়া এ বছরের আয়োজক। তারা ১০ লাখ বিদেশী দর্শক প্রত্যাশা করছে।
পাশাপাশি, স্টেডিয়াম সংকটেও ভুগতে পারে কাতার। প্রথমে ১২টি স্টেডিয়ামের কথা বললেও, দেশটি এখন বলছে ৮টি স্টেডিয়াম প্রস্তুত থাকবে ২০২২ সালের মধ্যে। ফলে কিছু ম্যাচ বাইরের কোনো দেশকে আয়োজন করতে হতে পারে। ইরান হয়তো শেষ অবদি ওই সুযোগ পাবে না। কিন্তু স্রেফ আয়োজনের সম্ভাবনাই ইরানে ঘরোয়া বিতর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে। ইরানে মেয়েরা স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল দেখতে পারে না। ফলে, বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনা উঠায়, ইরানে এখন যেন রাজনৈতিক ফুটবল চলছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত কি না।
কাতার পরিকল্পনা করছে বিপুল সংখ্যক ভক্তের জন্য বিলাসবহুল জাহাজকে হোটেল হিসেবে ব্যবহার করার। এমনকি অভিবাসী শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্মিত বিভিন্ন শিবিরকে হোটেলে রূপান্তর করার পরিকল্পনা আছে দেশটির।
আবার উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সবাই কিন্তু কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেনি। কুয়েত, ওমান ও জর্দান এখনও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেছে। এ দেশগুলোও আবাসন ও ম্যাচ আয়োজনে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে এই দেশগুলো প্রস্তুতি শুরু করছে বলে কোন ইঙ্গিত মিলছে না।
এ বছর ইংরেজি নববর্ষের সূচনাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফায় বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের পতাকা প্রদর্শন করেছে। শুধুমাত্র কাতার একমাত্র ব্যতিক্রম। সম্প্রতি, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দাবা টুর্নামেন্টেও কাতারের পতাকা প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
২০২০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে ইরানের অন্তর্ভূক্তি আরও জটিলতা সৃষ্টি করবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ওই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কারণ, ইরানের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো সম্পর্ক নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইরানের ওপর। অবশ্য, দেশ দু’টি এ বছরের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
কাতারের সামগ্রিক বিশ্বকাপ আয়োজন পরিকল্পনার দায়িত্বে আছেন হাসান আল-থাওয়াদি। তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, যে দেশই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে থাকুক না কেন, সকলকে স্বাগত জানানো হবে। তার ভাষ্য, ‘যদি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শীতকালীন অলিম্পিকসের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যও বিশ্বকাপের জন্য একসাথ হতে পারবে।’সুত্র:- মানব জমিন

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com