মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
মুসলিম জাহানের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। শান্তি, সম্প্রীতি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে এ উৎসব। দিনটি সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। যদিও এবারের ঈদুল আজহা এমন একটি সময় সমাগত হয়েছে, যখন বিশ্ব যাচ্ছে একাধিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনো ভালো খবর না থাকলেও অতিসম্প্রতি জাতিসংঘে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস ইতিবাচক। আমরা চাই, যুদ্ধের এ ভয়াবহতা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে উভয় দেশ এ প্রস্তাব মেনে নেবে। আবার এদিকে আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মান নাগালের বাইরে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড অভ্যন্তরীণ সংকট যেমন বাড়িয়েছে, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্ষুণ্ন করেছে দেশের ভাবমূর্তি। এর পরও আমরা আশাবাদী যে, পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী ধারণ করে ত্যাগ ও সততার জীবনই হবে সবার আরাধ্য। সবাইকে ঈদ মোবারক!
পবিত্র ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করা মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দান করেন। এর পর থেকে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই কোরবানি দেওয়া হয়। পাঁচ দিন ধরে চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান আরাফাত ময়দানে সমবেত হন। এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্তও বটে।
পবিত্র ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা। পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। আসলে কোরবানি দিতে হয় মানুষের সব রিপুকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা। সৎ পথে উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা পশু কোরবানির মাধ্যমেই তা সম্পন্ন হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, কোরবানির এ মর্মবাণী আমাদের সব সময় স্মরণে থাকে না। প্রতিযোগিতা করে মাংস খাওয়া এবং মাসের পর মাস ডিপফ্রিজে জমিয়ে রাখা ইদানীং আমাদের কালচারে পরিণত হয়েছে। অথচ দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ দুবেলা খেতে পায় না, অনেক শিশু অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধির শিকার। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করা এবং সাধ্যমতো তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সামর্থ্যবানদের একান্ত কর্তব্য।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় বান্দার তাকওয়া। কাজেই কোরবানির অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আল্লাহতায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। আমরা তার আদেশ পালন করব অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়।
পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে একই দিনে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানির কারণে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। তাই সবার উচিত যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার প্রবণতা ত্যাগ করা। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে এ সময় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। এ আনন্দময় উৎসবে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, বিপণনকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ অমলিন হোক।