বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
ই-কণ্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। আইনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করতে আজ শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আর রোববার বসবেন জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে রায়-পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র কয়েক নেতা ও আইনজীবীরা দেখা করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ যান। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। মামলার রায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে চিন্তিত মনে হয়নি বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত এক আইনজীবী। রায় নিয়ে নেতাকর্মীরা যাতে উদ্বিগ্ন না হন, সে ব্যাপারে বার্তা দিতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিকে রায়ের কারণে খালেদা জিয়ার তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফর স্থগিত করা হয়েছে। মায়ের কবর জিয়ারতের লক্ষ্যে আগামী শনিবার দিনাজপুরের উদ্দেশে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার কথা ছিল তার।
রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ইতিমধ্যে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত একাধিক টিম তৃণমূল সফরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। রায়ের দিন দেশের সব নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় বিপক্ষে গেলে কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা যাবে তা যেন একযোগে পালন করা হয়। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। রায়ের দিন সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ব্যাপক গণজমায়েত বা শোডাউন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে রায়কে কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। এ ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক দলটির হাইকমান্ড। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জোটের পক্ষ থেকেও রায়-পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিভিন্ন সংগঠন, দল এবং জোটের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় কারাবরণের কর্মসূচির কথাও ভাবছেন। জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় কারাবরণের মতো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার বিচার কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। মামলায় খালেদা জিয়ার জড়িত থাকা কিংবা অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমান করতে পারেনি। আর তার বিরুদ্ধে আদালতে যেসব ফাইল নিয়ে এসেছে তা ঘষামাজা, এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাক্ষর পর্যন্ত ছিল না। অথচ জোর করে এ মামলায় জড়িয়ে তাকে সাজা দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, আশা করি রায় তার পক্ষে যাবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে যা মনে হয়, হচ্ছে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে যেতে না দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে সরকার। আর এটি করা হলে নির্বাচনের জন্য বিএনপি তৈরি হচ্ছিল, সেটা বাধাগ্রস্ত হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আজ রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে করণীয় কি হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। বিএনপি ওই রায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি দিক বা না দিক, কিছু যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ পায়, তাহলে তখন থেকে এ সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা দেয়া হলে দেশের জনগণ তা কখনও মেনে নেবে না। সাধারণ মানুষও তা গ্রহণ করবে না। এর প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি আইনিভাবেও তা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে সিনিয়র আইনজীবী প্রাথমিক কাজ শেষ করেছেন। বিশেষ আদালতে সাজা দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে আপিলের শর্তে ওই আদালতে জামিন চাওয়া হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে রায়ের সার্টিফাইড কপি তুলে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি রয়েছে আইনজীবীদের। রায় বিপক্ষে গেলে আইনজীবীদের টানা আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচি নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছে। দল ও জোটের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। পেশাজীবীরা যাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলাটি তাড়াহুড়া করে একটি পর্ব শেষ করতে চাচ্ছে। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ মামলায় খালেদা জিয়ার কোনো সাজা হবে না দাবি করে তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার কোনো সত্যতা নেই। ক্ষমতাসীনরা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আগাম মন্তব্য করে আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সরকারের প্রভাবিত হয়ে আদালত নেতিবাচক কোনো রায় দিলে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণের পর বিএনপির অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন জোটের নেতারাও। ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিলে তা হবে সরকারের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। খালেদা জিয়াকে ছাড়া জোটের শরিকরাও নির্বাচনে যাবেন না। তাকে বাদ দিয়ে একাদশ নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিএনপি কর্মসূচি দিলে বিশ দলীয় জোটের শরিকদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। পাশাপাশি এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
জাতীয় গণতান্তিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, তিনিসহ জোটের আরও দুই শীর্ষ নেতা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের অবস্থান জানার জন্য। রোববার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হতে পারে- সেখানে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। তবে জোটের প্রধান খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হলে বিএনপি যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে আমরা তাতে সমর্থন দেব। সূত্র : যুগান্তর